১. উভয় পক্ষ ফিলসফিকে অপছন্দ করে!
কট্টর আস্তিক এবং কট্টর নাস্তিক— উভয় পক্ষ ফিলসফিক্যাল আর্গুমেন্টকে এড়িয়ে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নাস্তিকগণ বিজ্ঞান দিয়ে নাস্তিকতাকে প্রমাণ করতে চায়। এটি বিজ্ঞানের একটি করুন অপব্যবহার। পক্ষান্তরে, বিশেষ করে ধর্মবাদী আস্তিকগণ বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে আস্তিকতাকে সঠিক হিসেবে প্রমাণ করতে চায়।
অথচ, আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতার কোনোটাই বিজ্ঞানের বিষয় নয়। বরং জীবন ও জগৎ সম্পর্কে যে সকল মৌলিক প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতার প্রসঙ্গ আসে সেগুলো হলো পিউর মেটাফিজিক্যাল ইস্যুজ। ফিলসফি, বিশেষ করে মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যা না বুঝার কারণে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে না।
বিজ্ঞান জানতে চায়, কীভাবে হয়েছে? আর ফিলোসফি জানতে চায়, যেভাবে হয়েছে তা সেভাবেই কেন হয়েছে? অন্য কোনোভাবে হলো না কেন? যা কিছু আছে এবং যেভাবে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে তার পিছনে কোনো অন্তর্নিহিত কারণ আছে কিনা।
২. কখন এবং কীভাবে আস্তিকতা বা নাস্তিকতা ধর্ম হয়ে ওঠে?
আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতার সাথে যখন (১) আধ্যাত্মিকতা বা সেন্স অফ ট্রানসেন্ডেন্স এবং (২) বিধিবদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান তথা রিচুয়াল যুক্ত হয় তখন সেই নাস্তিকতা কিংবা আস্তিকতা কোনো না কোনো ধরনের ধর্ম হয়ে ওঠে।
৩. জীবনের ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে
আত্মার জগত থেকে এই জগৎ হয়ে পরকাল— এভাবে আস্তিক্যবাদী ওয়ার্ল্ডভিউ মানুষের জীবনের ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করে। আর নাস্তিক্যবাদী বিশ্বদৃষ্টি অনুসারে আমাদের এই জগৎ ও জীবন হলো একটি অকস্মাৎ ঘটে যাওয়া দৈব ঘটনা। তাদের মতে, জীবনের নিরন্তর ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করা হলো, অসহায়ত্ববোধের কারণে সৃষ্ট হওয়া মানুষের এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি।
৪. নৈতিকতার কি কোনো ভিত্তি আছে?
মানুষ মাত্রই নৈতিক জীব। তো, এই নৈতিকতার উৎস কী? এই প্রসঙ্গে নাস্তিকেরা মনে করে, নৈতিকতা হলো ঘটনাক্রমে মিলে যাওয়া ভালো থাকার কিছু উপায়। পারস্পরিক সম্মতির বাইরে এর কোনো অবজেক্টিভ ফাউন্ডেশন নাই।
পক্ষান্তরে, আস্তিকেরা মনে করে নৈতিকতার একটি অন্তর্নিহিত ভিত্তি আছে। খোদা হচ্ছেন নৈতিকতার চূড়ান্ত মানদণ্ড।
৫. এই জীবনের কী কোনো উদ্দেশ্য আছে?
শুনতে এটি খুব বিদঘুটে মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, নাস্তিক্যবাদী জীবনদর্শনে জীবনের কোনো আল্টিমেইট মিনিং নাই।
জীবনে আমরা যা কিছু করি, কোনো না কোনো কারণেই সেটা করে থাকি। আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সব কিছুর পিছনে কোনো না কোনো কারণ বা অর্থ নিহিত থাকে। প্রাকৃতিক জগতেও বিনা কারণে কোনো কিছু ঘটে না। এটাকে বলে প্রিন্সিপাল অফ সাফিশিয়েন্ট রিজন। অথচ, একজন নাস্তিকের দৃষ্টিতে, সামগ্রিকভাবে এই জগত ও জীবনের, প্রাণের এই বিপুল উৎসবের কোনো সত্যিকার বা intrinsic উদ্দেশ্য, অর্থ বা কারণ নাই।
৬. মানুষের কি ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে?
অত্যন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে, নাস্তিক এবং নাস্তিক উভয় পক্ষ মনে করে, মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা নাই। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা না থাকা প্রসঙ্গে বিজ্ঞানবাদীদের সাথে জাবারিয়াদের (অদৃষ্টবাদী মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়) কোনো পার্থক্য নাই।
সবকিছু প্রাকৃতিক নিয়মে চলছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটার কোনো সুযোগ নাই। আমরা যা কিছু করি তা আমাদের আশেপাশের প্রাকৃতিক ঘটনাবলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমরা ভুল করে মনে করি, আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। এই তালগোলে ব্যাপারটাকে বোঝানোর জন্য compatibilism নামে একটা গালভরা টার্মের কথা বলা হয়।
এই হলো ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে নাস্তিক পক্ষের পজিশন। নাস্তিকতায় বিশ্বাস করাটাকে তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছার ফলশ্রুতি মনে করে কিনা, সেটা ঠিক জানি না। আমাদের পারিপার্শ্বিক সামাজিক বাস্তবতায় নাস্তিকেরা নিজেদেরকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিতে চায় না। এ কারণে আত্মস্বীকৃত কোনো নাস্তিকের সাথে এ পর্যন্ত আমার খোলামেলা কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সে যাই হোক।
ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে আস্তিকদের অবস্থান বরং কিছুটা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। তারা মনে করে, বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত খোদা তায়ালা মানুষকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Towkir Hasan Manik: নাস্তিকতা কোনো ওয়ার্ল্ডভিউ বা এথিকাল সিস্টেম নয়। নৈতিকতা, জীবনের উদ্দেশ্য এসব প্রশ্নে উত্তর দেয় সেক্যুলার হিউমানিজম, যা নাস্তিকতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দর্শনগত ওয়ার্ল্ডভিউ।
এমনকি ঈশ্বর/খোদা নিজেও কোনো দর্শন, ওয়ার্ল্ডভিউ বা সিস্টেম নয়। এটা একটা প্রপোজড এন্টিটি। এযাবৎকালে কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্বই প্রমাণসাপেক্ষে দেখানো সম্ভব হয়নি, এমনকি আস্তিকরা কোনো ঈশ্বর আছে, তার প্রোপার্টিজ কী কী, চিন্তা করে এ ব্যাপারে সর্বসম্মতও হতে পারেনি। অপরপক্ষে, এ ব্যাপারে তাদের ভিতর শুধুই ক্যাওটিক ডিসেগ্রিমেন্ট আছে।
Mohammad Mozammel Hoque: আসলে কোনো ওয়ার্ল্ডভিউ বা এথিকাল সিস্টেম এমন নয় যে এর অনুসারীরা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একমত।
ঈশ্বর থাকা কিংবা ঈশ্বরহীনতা— এ দুটোই হচ্ছে জগতের উৎপত্তি ও পরিচালনা সংক্রান্ত দুটি broad-based ওয়ার্ল্ড ভিউজ। এক অর্থে বলা যায়, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা উভয় দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে একেকটি umbrella of worldviews।
ফিলসফির বাদবাকি সবগুলো বিষয়ের মতো, এটিও একটি বিতর্কযোগ্য, তর্কসাপেক্ষ এবং ব্যাপকভিত্তিক তত্ত্ব বা মতবাদ।
ফিলসফাররা কোনো বিষয়ে একমত হবে, এটা philosophical way of augmentation সম্বন্ধে অসম্ভব ভুল ধারণা। বরং, ব্যক্তিমানুষ হিসেবে আমরা ফিলসফিক্যাল আর্গুমেন্টকে ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছে থাকি। নিজের মতো করে নিজের বিশ্বদৃষ্টি নির্মাণ করি। সেটি হতে পারে ভুল কিংবা সঠিক, সেই প্রসঙ্গ ভিন্ন আলোচনা।
Towkir Hasan Manik: এগুলো যে ব্রড ওয়ার্ল্ডভিউ, এটা মানতেও আমার সমস্যা নেই। আর ঠিক এ কারণেই আপনার পোস্টের আস্তিকতা ও নাস্তিকতার পক্ষ থেকে বিষয়গুলোতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া মতামতগুলো অগ্রহণযোগ্য।
উদাহরণস্বরূপ:
“নাস্তিকেরা মনে করে, নৈতিকতা হলো ঘটনাক্রমে মিলে যাওয়া ভালো থাকার কিছু উপায়। পারস্পরিক সম্মতির বাইরে এর কোনো অবজেক্টিভ ফাউন্ডেশন নাই।”
আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে নাস্তিকতার সবগুলো ওয়ার্ল্ডভিউতে অব্জেক্টিভ ফাউন্ডেশন অসম্ভব!
ফিলোসোফররা কোনো বিষয়ে একমত হতে হবে, এমনটাও আমি বলিনি। কিন্তু যেহেতু মতামতের ভিন্নতা এত বেশি, তাই আপনার পোস্টে এমন ব্রড সেন্সে স্পেসিফিক বিষয় সম্বন্ধে বলা উচিত হয়নি।
Mohammad Mozammel Hoque: objective and intrinsic অর্থ বা মূল্য থাকার মানে হলো আপনি সেটাকে গ্রহণ করেন বা না করেন, অর্থাৎ ব্যক্তি কী মনে করে তা কোনো ফ্যাক্টর নয়, বরং যা ভালো তা নিজ গুণেই ভালো, যা খারাপ তা নিজ গুণে খারাপ।
এভাবে যখন কোনো কিছুর আমরা অবজেক্টিভ ফাউন্ডেশন খুঁজতে যাই, তখন কয়েক স্তরের পরে গিয়ে আমরা ঈশ্বর-প্রশ্নে উপনীত হই। এসব কিছু কেন? এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর যদি পাওয়া যায় তাহলে বলতে হবে, সব ঔচিত্য ও অনুচিত্যের পিছনে একটা অবজেক্টিভ ফাউন্ডেশন আছে। আর যদি কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া না যায় তাহলে বলতে হবে, আপাতদৃষ্টিতে কিছু উদ্দেশ্য বা অর্থ পাওয়া গেলেও আল্টিমেইটলি এই জগৎ ও জীবনের কোনো উদ্দেশ্য বা অর্থ নাই।
তো, যেখানে এই জগৎ ও জীবনের কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ ও উদ্দেশ্য নাই, সেখানে অবজেক্টিভ মোরালিটি বলতে যেটা বোঝায়, সেটা আল্টিমেইটলি একজিস্ট করে না। যুক্তি আমাদেরকে এ কথাই বলে।
Rubel Sheikh: সত্যিই কি সেক্যুলার হিউমানিজম নৈতিকতা ও জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো উত্তর দেয়, স্যার!!!
Mohammad Mozammel Hoque: Rubel Sheikh, প্রত্যেক কাজের পিছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য আরোপ ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা ব্যতিরেকে মানুষের জীবনযাপন অসম্ভব। তাই, সেক্যুলারিজম বা যে কোনো ওয়ার্ল্ডভিউ কিছু আপাত-উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিনির্ভর-নৈতিকতার কথা তো অবশ্যই বলে।
নাস্তিকদের দৃষ্টিতে জগতের যেহেতু অন্তর্নিহিত কোনো উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, অর্থ বা তাৎপর্য নাই; অথচ উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, অর্থ ও তাৎপর্য ছাড়া আমরা যেহেতু কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারি না; সুতরাং আমাদের দায়িত্ব বা করণীয় হলো নিজেদের মতো করে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, অর্থ ও তাৎপর্য আরোপ করা বা তৈরি করে নেওয়া।
তাহলে বুঝতে পারা যায়, তাদের মতে, সার্বজনীন ও চিরন্তন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, অর্থ ও তাৎপর্য বলে কোনো কিছু না থাকায় যে যেখানে যেভাবে পারে, সে সেখানে সেভাবে অ্যাডজাস্ট করে চলবে বা নিজের লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করবে। এটাই হচ্ছে নাস্তিক্যবাদী নৈতিকতার মূল কথা।
এতদসত্ত্বেও নাস্তিক্যবাদী নৈতিকতার অনুসারীগণের মধ্যে যে মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়, সত্যিকারের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়, সেটি তাদের নাস্তিক্যবাদী তত্ত্বের সাথে মিলে না। তারা নিজেদের চিরন্তন মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে একদিকে অস্বীকার করতে পারে না, অন্যদিকে সেগুলোর দাবি হিসেবে খোদা তায়ালাকে মেনে নেওয়ার ব্যাপারটিকেও তারা গ্রহণ করে না। এজন্যই ইসলামের দৃষ্টিতে এটাকে বলা হয়েছে কুফরী করা বা গোপন করা।
মানবতাবাদী নাস্তিকদের জীবনযাপন এবং জীবনদৃষ্টি পরস্পর সাংঘর্ষিক। এজন্য বলতে হবে, তাদের ওয়ার্ল্ডভিউ বা জীবনদৃষ্টিটাই বরং ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ।
Towkir Hasan Manik: ঈশ্বরের অস্তিত্বই যেখানে প্রমাণিত নয়, সেখানে তাকে ভিত্তি করে ইচ্ছামতো যতই অবজেক্টিভ গাইডলাইন পাওয়া যাক না কেন তা কেবলই মিথ্যা অনুপ্রেরণা হিসেবে পরিগণিত হবে। অসংখ্য সভ্যতা অসংখ্য ঈশ্বরের উদ্ভাবন করেছে, আর সেই সকল ঈশ্বরের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন যা মেটানোর ইতিহাসে মানবজাতির সামগ্রিক ‘সুখী থাকা’ খুব কমই বিবেচ্য ছিল। কারণ, এই ‘সুখী থাকা’ ছিল আরবিট্রারি, যে কোনো ঈশ্বরের ইচ্ছানুধীন। অথচ মানুষ কীভাবে ভালো থাকবে— ঠিক এ বিষয়টিই সেক্যুলার হিউমানিজমের মুখ্য বিষয়।
প্রকৃতির জ্ঞান আহরিত হয় পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং যৌক্তিক পর্যালোচনার মাধ্যমে। মানুষ প্রকৃতির অংশ এবং বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার ফলাফল। নৈতিক মূল্যবোধ আসে মানব অস্তিত্ব রক্ষা, প্রয়োজন এবং সুখী থাকার ইচ্ছা থেকে যা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরীক্ষিত। আমরা জানি, আমি যা করি সেটির প্রভাব শুধু আমাকে নয়, অপরকেও প্রভাবিত করে। এটি সবার জন্য সত্য। অন্যান্য বেশ কিছু প্রাণীর মতো প্রকৃতিগতভাবে মানুষ সামাজিক প্রাণী ও সহানুভূতি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এবং আমরা যারা সুখী থাকতে চাই তারা অভিজ্ঞতালব্ধভাবে জানি, জীবনের সন্তুষ্টি অর্জিত হয় মানব আদর্শ পরিপূর্ণ করে এবং তাই এটি কার্যকর হয় সমাজের উন্নয়নে ব্যক্তিগত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এবং এই সিস্টেমটি মানুষের দ্বারা এবং মানুষের জন্যই, ফলে নতুন জ্ঞানের পরিপেক্ষিতে আবিষ্কার, আলোচনা, বিতর্ক ও শিক্ষাসাপেক্ষে মানব স্বার্থে সেটি সংশোধন করা সম্ভব।
এখন এই যে ‘সুখী থাকা’— কেন এটা চাইবো? হয়ত বলবেন যে আমরা সুখী থাকতে চাই তাই সুখী থাকতে চাই। আর এ জন্য এটা অবজেক্টিভ হতে পারে না। কিন্তু এটির অবজেক্টিভ ইম্পেরাটিভ হওয়া লাগবে এমনও আমি বলছি না।
আর আপনি যদি সুখী থাকতে না চান তাহলে আপনার সাথে আমার কথা হচ্ছেও না।
আমি শুধু স্বীকার করে নিচ্ছি, এটাই সত্য যে আমি ভালো থাকতে চাই, এবং আশা করি আপনিও ভালো থাকতে চান। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা একসাথে সন্ধান ও বিবেচনা করতে পারি কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ভালো হবে। এবং তখন সেই সিদ্ধান্তগুলোকে অবজেক্টিভলি ভালো বা খারাপ বলা যাবে।
এটিই হলো নৈতিকতা ভিত্তি।
Towkir Hasan Manik: সত্যি কথা হচ্ছে এমন একটিও নৈতিক অবজেকশন বা সমস্যা নেই, যা সেক্যুলার হিউমানিজম সমাধান করতে পারে না এবং শুধু ঈশ্বরের আনয়নের মাধ্যমেই সম্ভব। অর্থাৎ ঈশ্বর নৈতিক সমস্যা সমাধানে আননেসেসারি। যেমন, যদি আপনি আগামীকাল থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ছেড়ে দেন তাহলে কি সাথে সাথে খুন-ধর্ষণ শুরু করে বেড়াবেন?
সেক্যুলার হিউমানিজমের মতো আস্তিকতায় এ ধরনের সর্বসম্মত নির্দিষ্ট কোনো মডেল নাই। এমনকি আস্তিকতায় এমন ঈশ্বরেও বিশ্বাস করা যায়, যে মানব কর্মকাণ্ডে আগ্রহীই নয়।
আমরা কীভাবে জানতে পারি, যে ঈশ্বর এই অবজেক্টিভ ফাউন্ডেশন দিচ্ছেন, সে মানুষের চূড়ান্ত ভালো আশা করে? এটা কীভাবে প্রমাণ করা সম্ভব যে ঈশ্বর যা চান তাই ভালো? এমনকি বিভিন্ন ধর্মের ঈশ্বরের ধারণা স্পষ্টতই মানববিকাশের পরিপন্থী। আবারো, ঈশ্বর সম্পর্কে আমরা যা জানি তা কোনোভাবেই নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়, বরং অনুমান।
Mohammad Mozammel Hoque: ঈশ্বরের অস্তিত্ব ‘প্রমাণিত’ হতে হবে কেন?
ঈশ্বর নিজেও চান না তাঁর অস্তিত্বের পক্ষে ‘প্রমাণ’ নিয়ে লোকেরা তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করুক। এ বিষয়ে আপনি আমার এই লেখাটা পড়তে পারেন: পরমসত্তা, ঈশ্বর, জ্ঞান ও বিশ্বাস। অনেক আগের লেখা। লেখাটা যে সাইটে আছে সেখানে এ সংক্রান্ত আরো অনেক লেখা পাবেন। আগ্রহ থাকলে সেগুলো এক্সপ্লোর করে দেখতে পারেন।
Towkir Hasan Manik: আপনার যদি মনে হয় ঈশ্বর নিজেও চান না যে তার অস্তিত্ব প্রমাণিত হোক, তাহলে হয় সে ঈশ্বর তার অস্তিত্ব লুকাতে চায়, আর না হয় তার অস্তিত্ব নেই।
Mohammad Mozammel Hoque: আপনি কি লিঙ্কের লেখাটা পড়ে মন্তব্যটা করছেন? নাকি, পড়ার আগেই মন্তব্যটা করেছেন? ফ্র্যাঙ্কলি জানতে চাচ্ছি?
Towkir Hasan Manik: পড়ার আগেই মন্তব্য করেছিলাম, কিন্তু পড়ার পরও একই মন্তব্য।
Salim Reza: অধিকাংশ নাস্তিকের জ্ঞানের সীমা অতি সামান্য হলেও তারা এমন কিছু কথায় আপনাকে কাবু করে ফেলবে, যার উত্তর নিজে নিজে বুঝলেও তৎক্ষণাৎ জবাব দিতে ব্যর্থ হবেন। সমস্ত নাস্তিকদের মাথায় সাকুল্যে ৮০ থেকে ১০০টি ঋণাত্মক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। বৈশ্বিক এবং কোরআনিক জ্ঞান থাকলে আপনি সেই উত্তরগুলো সহজেই দিতে পারবেন।
ওদের ধারণা, সমস্ত বিজ্ঞানীই নাস্তিক এবং তারা স্রষ্টাকে অস্বীকার করে। পড়াশোনা এবং জ্ঞানের অভাবে তারা এমন উক্তি করে থাকে। এ পর্যন্ত যত নামকরা বিজ্ঞানী যত বড় আবিষ্কার করেছেন তাদের সবাই যে নাস্তিক ছিল বা এখনো আছে, এমনটি নাস্তিকরা জেনে থাকলে তারা খোয়াবের মধ্যেই আছে।
আমি মানছি যে বিজ্ঞানীদের প্রায় ৫০% নাস্তিক থাকলেও তারা কখনোই মূর্খ নাস্তিকদের মতো ধর্ম এবং স্রষ্টাকে গালি দেয় না।
২০০৯ সালের মে এবং জুন মাসে পিউ গবেষণা কেন্দ্র (Pew Research Center) আমেরিকান বিজ্ঞানী অর্থাৎ যারা আমেরিকান বিজ্ঞান সংস্থার সাথে জড়িত তাদের উপর একটি জরিপ চালায়। সেখানে ৫১% বিজ্ঞানী স্রষ্টাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে ৩৩% বিজ্ঞানী স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে। ১৮% বিজ্ঞানী সার্বজনীনভাবে স্রষ্টাকে বিশ্বাস বা মহাশক্তিকে বিশ্বাস করে।
এখন প্রশ্ন হলো নাস্তিকরা কেন বিজ্ঞানীদেরকে দেবতার আসনে বসিয়েছে?
আমি আগেই বলেছিলাম তাদের জ্ঞানের স্বল্পতাই এর মূল কারণ। দুঃখজনক হলো পড়াশোনা না করেই ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের যত যুদ্ধ!
আমি অন্য এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, যে পেশায় যত বেশি ঝুঁকি তারা তত বেশি আল্লাহ্, ঈশ্বর বা গডের উপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখে। যারা মৃত্যুকে দেখতে পায় বা পদে পদে মৃত্যু যাদের হাতছানি দেয়, তারা প্রায় সবাই স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে থাকে।
আমি এখন চিকিৎসকদের মধ্যে শতকরা কত জন স্রষ্টার উপর আস্থাশীল তার একটি জরিপ উল্লেখ করছি:
ডা. ফার কারলিন যিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাকলিন সেন্টার ক্লিনিক্যাল মেডিক্যাল এথিক্সের পক্ষে চিকিৎসকদের উপর একটি জরিপ চালান। জরিপ চালাতে গিয়ে তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান এই কারণে যে স্পষ্টভাবে অধিকাংশ চিকিৎসকরাই স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখেন।
ঐ সংস্থা সারা দেশব্যাপী ১০৪৪ জন চিকিৎসকের উপর জরিপ চালিয়ে দেখে যে ৭৬% চিকিৎসক স্রষ্টার উপর আস্থা বা বিশ্বাস রাখেন। তাদের মধ্যে ৫৯% চিকিৎসক বিশ্বাস করেন যে মৃত্যুর পর কিছু একটা আছে এবং ৫৫% চিকিৎসক বিশ্বাস করেন যে ধর্ম তাদেরকে এই পেশার অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে থাকে।
আমি নাস্তিকদেরকে এই বলে আশ্বস্ত করছি, মহান আল্লাহ্ রাব্বূল আ’লামিনের অশেষ রহমতে, আমি কোনো মনগড়া পরিসংখ্যান দেইনি এবং পারতপক্ষে ভুয়া তথ্য এবং উপাত্ত দেয়া থেকে সর্বদা নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে থাকি।
হে মহান আল্লাহ্ রাব্বূল আ’লামিন, আমাদের সবাইকে বুঝার এবং মানার তৌফিক দিন। আমীন।