“কর্মজীবী মহিলা যারা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য চাকরি করেন, ইসলামে তাদের কেমন মর্যাদা দেয়া হয়েছে? তাদের সাথে আমাদের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত? আমার আম্মু জানতে চেয়েছেন।” – একজন ইনবক্সে প্রশ্ন করেছে।
নারী অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ইদানীং পরপর কিছু লেখা প্রকাশ করার কারণে প্রথমে ভাবছিলাম রেসপন্স না করি। পরে ভাবলাম, উত্তর না দেয়াটা বোধ হয় অশোভন হবে। প্রশ্নকারী আমার পরিচিত। স্নেহভাজন প্রাক্তন ছাত্র। তারচেয়েও বড় কথা হলো, প্রশ্ন করেছে ওর মায়ের তরফে।
কর্মজীবী নারীদের আমি সম্মান করি। বরং আমি মনে করি, নারী অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সমকালীন প্রেক্ষাপটে সব নারীদেরই উচিত কিছু না কিছু আয়-রোজগারের সাথে লেগে থাকা। ইসলাম চায়, নারীদের আর্থিক দায়ভার পুরুষেরা বহন করুক। এ কারণে কেউ কেউ মনে করে, নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার দরকার নাই। এটি ভুল ধারণা। ধর্মের চেয়েও এই ভুল ধারণার কারণ বিদ্যমান সামাজিক অপসংস্কৃতি। বিশেষ করে, পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা।
দেখা যায়, পুরুষরা নারীদের ওয়ারিশি সম্পত্তির ভাগ দিতে চায় না। মোহরানা হয়ে গেছে নামকাওয়াস্ত, তামাশা। অথচ, অর্থনৈতিক ভীত বা শক্তি না থাকলে কোনো মানুষেরই থাকে না যথোপযুক্ত মানবিক মর্যাদা। হোক সেটা নারী অথবা পুরুষ। যে কেউ, যে কারো জন্য এটি সত্য।
একজনকে বিএ-এমএ পাশ করাতে কী পরিমাণ টাকা রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয়, তা জানার চেষ্টা করলে আমরা বুঝতে পারবো, শিক্ষিত নারীদের চাকরি না করা রীতিমতো দণ্ডনীয় অপরাধ। মানলাম, শিক্ষা সবার অধিকার। কিন্তু সেটা প্রাথমিক শিক্ষা। শখের বশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা হলো সুযোগের অপব্যবহার। এটি নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য এই ধরনের বিলাসিতা হলো জাতীয় অপচয়।
যেসব শিক্ষিত নারী চাকরি করতে চান না, বা যাদের স্বামী চাকরি করতে দেয় না, তাদের ব্যাপারে তাই শোভন কোনো মন্তব্য এ মুহূর্তে আমার আকলে ধরছে না। আল্লাহ মালুম, বাচ্চাকে অ-আ-ক-খ পড়ানোর জন্য বিএ/এমএ পাশ করার কী দরকার! বউকে চাকরি করতে দিতে নারাজ, অথচ চাই উচ্চশিক্ষিত বউ– এই ধরনের মানসিকতা যেসব পুরুষের তারা হলো পুরুষতান্ত্রিকতার নিকৃষ্ট উদাহরণ।
মেয়েদের মধ্যেও দেখেছি, এমনকি আমি যাদের মধ্যে কাজ করি এমন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী পর্যারের একাধিক নারী আমার কাছে স্বীকার করেছে– বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের অধিকাংশই পড়াশোনা করছে মূলত ভালো বিয়ে হওয়ার জন্য। তাই, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে আয়-উপার্জনের কোনো একটা ব্যবস্থা করার জন্য তেমন সিরিয়াসনেস আর লক্ষ করা যায় না। ইদানীং অবশ্য এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হচ্ছে।
আমি যেহেতু কম্পিটেন্ট গার্লদের পছন্দ করি, ইচ্ছা আছে ‘কম্পিটেন্ট গার্লস’ টাইপের কিছু একটা করার, তাই আমি চাই, সব মেয়েরাই কিছু একটা করুক। শুধু চাকরি কেন, তারা ছোট বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগও নিতে পারে। শুধু ভক্তিতে গদগদ হয়ে খাদিজার (রা) কথা বললে হবে না, নারীমাত্রেরই হওয়া উচিত তাঁর মতো স্বাবলম্বী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হবার চেষ্টা করা। কর্মজীবী নারীদের দাম্পত্য সম্পর্ক ও পারিবারিক জীবনের মডেল হতে পারেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন দ্যা গ্রেট লেডি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা।
পাশ্চাত্য জীবনদৃষ্টি বা প্যারাডাইমপ্রসূত নারীর ক্ষমতায়নের কথা যারা বলে (যেমন– এনজিওগুলো), তাদের সাথে আমার মতবিরোধ অত্যন্ত মৌলিক। তারা নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রকৃতিগত পার্থক্যকে পারতপক্ষে স্বীকার করতে নারাজ। তাদের মতে, নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য মাত্রই সমাজ আরোপিত। অতএব, তা বৈষম্য বা জুলুম। এখনকার সমাজব্যবস্থায় যে ডমিন্যান্ট পুরুষতন্ত্র, বিশেষ করে পারিবারিক নির্যাতন বা ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের যে সমস্যা, সেটাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে তারা নারীদেরকে তাদের পছন্দমতো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন করার কথা বলে। দেখবেন, নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়া, মোহরানার টাকা পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে ভুলেও তারা কোনো কথা বলে না।
তাদের ঘোষিত মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। ভালো কথা। দারিদ্র বিমোচনে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনস্বীকার্য। কিন্তু তাদের এই দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমের প্রধান কর্মশক্তি তথা পুরুষেরা কই? তারা এক্সক্লুডেড কেন? আমার ধারণায়, নারীদেরকে যতটা সহজে ভুল বোঝানো সম্ভব, পুরুষদেরকে ম্যানিপুলেট করা ততটাই কঠিন। আসলে এদের অঘোষিত উদ্দেশ্য ও হিডেন এজেন্ডা হচ্ছে, আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোতে ফাটল ধরানো। পারলে এই স্ট্রাকচার ভেঙ্গে দিয়ে তদস্থলে তথাকথিত উন্নত বিশ্বের মতো লিভিং টুগেদার সিস্টেম চালু করা।
লিভিং টুগেদার সিস্টেম ও পরিবার ব্যবস্থার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, পারিবারিক ব্যবস্থায় থাকে প্রাতিষ্ঠানিক ক্রমসোপান বা হায়ারার্কি। বলাবাহুল্য, ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ হলো পরিবারের প্রধান। এক নম্বর ব্যক্তি। ন্যায়সংগত যে কোনো বিষয়ে তার কর্তৃত্ব বজায় থাকতে হবে। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যেভাবে মান্যগণ্যের একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে হয়।
প্রকৃতিসঙ্গত কারণে ইসলাম পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থার কথা বলে। কর্মজীবী নারী কীভাবে এই ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে চলবে সেটা বুঝার জন্য আমাদেরকে প্রফেট মুহাম্মদের (সা) সাথে খাদিজাতুল কুবরার (রা) পারিবারিক জীবন কেমন ছিলো, তা ভালো করে বুঝতে হবে। আগেই বলেছি, কর্মজীবী মুসলিম নারীদের জন্য তিনি হলেন আদর্শ উদাহরণ।
কর্মজীবী নারীদের প্রথম দায়িত্ব হলো সংসারে কন্ট্রিবিউট করা। তা না করে স্বামীর কমান্ড ও এডমিনিস্ট্রেশনের পাল্টা হিসাবে প্যারালাল-এডমিনিস্ট্রেশান ও ইকোনমিক স্ট্রাকচার গড়ে তুললে সেই সংসার পরিণত হবে কুরুক্ষেত্রে। যে মেয়ে টাকা কামায়, সে যদি দুর্ব্যবহার না করে, তাহলে আমার ধারণায় তার সংসারে সুখ-শান্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কথা যা-ই থাকুক না কেন, বাস্তবে দেখা যায় অনেক কর্মজীবী নারী স্বামীর হাতে নির্যাতিত। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, সহনীয় মাত্রার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেক্রিফাইস করার পরও যদি স্বামীর অত্যাচার না থামে, নির্যাতন যদি সহ্যের সীমা পেরিয়ে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট নারীর উচিত মনকে শক্ত করে ‘কঠোর’ সিদ্ধান্ত নেয়া। এটি যেহেতু একান্ত ব্যক্তিজীবনের নানাবিধ আবেগ, অনুভূতি ও প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই বাহির থেকে এ ব্যাপারে আমরা বেশি কিছু বলতে পারি না।
বিবাহিত নারীদের উপার্জনের টাকার মালিক কে? এটি একটি ক্রুশিয়াল এন্ড সেনসিটিভ কোশ্চেন। ইদানীংকার টেলিভিশন-হুজুরদের পপুলিস্ট বয়ান অনুসারে, বউয়ের টাকার মালিক বউই। আমি আলেম নই। ফকীহও নই। কিন্তু ইসলামিক বিষয়ে ন্যূনতম লেখাপড়া করা একজন কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ও নিষ্ঠাবান মুসলমান। তাই বলছি, একশ্রেণীর পপুলিস্ট আলেমের এই ধরনের নারীতুষ্টিমূলক কথা সামগ্রিক বিবেচনায় খণ্ডিত বা অর্ধসত্য।
এর বিপরীতে আমরা দেখতে পাই, কর্মজীবী নারীদের অনেক স্বামীর ধারণা, বউয়ের টাকার মালিক বউ নয়। বরং বউয়ের স্বামী হিসেবে সে নিজে। বউ যেন তার টাকা কামানোর মেশিন। কিংবা বাগানে লাগানো টাকার গাছ। এ ধরনের পুরুষবাদী ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এ বিষয়ে আমার অভিমত হলো, এই উভয় ধারণাই প্রান্তিকতা ও ভুল চিন্তা।
পাঠক, আপনার টাকা একান্তই আপনার। আমার টাকা একান্তই আমার। আপনার-আমার মধ্যকার মালিকানার সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বা মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ। পারিবারিক পরিমণ্ডলে ব্যাপারটা এ রকম ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ধরনের নয়। স্বামীর অর্থ-সম্পদে স্ত্রীর থাকে পরোক্ষ মালিকানা। এক ধরনের অধিকার। তেমনি স্ত্রীর অর্থ-সম্পদেও থাকে স্বামীর এক ধরনের পরোক্ষ মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ। পরষ্পরের নীরব-মতৈক্য, সম্মতি বা অনাপত্তির ভিত্তিতে তারা পরস্পরের সম্পদ হতে ব্যয় করতে পারে। পরস্পরের সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।
স্ত্রীর মোহরানা বা ওয়ারিশি সম্পত্তি যতটা স্ত্রীর একান্ত ও স্বাধীন মালিকানাধীন, চাকরি কিংবা ব্যবসার মাধ্যমে স্ত্রীর উপার্জনের টাকা তার ততটা এক্সক্লুসিভ বা একান্ত নয়। নিজের টাকা খরচের বেলায় স্ত্রী তার সংসারের প্রয়োজনকে প্রায়োরিটি দিবে, এটাই স্বাভাবিক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে খরচের খাত ভাগাভাগি হতে পারে। সংসারের জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বা বৈধ যে কোনো কাজে একজন কর্মজীবী নারী তার টাকাপয়সা খরচ করতে পারে। অংশত সঞ্চয়ও করতে পারে।
কিন্তু, পুনরায় খেয়াল করেন, আপনার-আমার মধ্যে যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মালিকানা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পদের মালিকানার বিষয়টি কিন্তু ততটা স্বতন্ত্র নয়। ইসলামের আলোকে ব্যাপারটা কেমন হওয়া উচিত, তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি স্ত্রীর চাকরি করার ব্যাপারে স্বামীর অনুমতি থাকার শরয়ী বাধ্যবাধকতা থেকে। যার চলাচল আরেকজনের অনুমতির ওপর নির্ভর করে, তার আয়-উপার্জনের উপরেও সেই অনুমতিদাতা অথরিটির এক ধরনের প্রত্যাশা ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
এটি কি করে হতে পারে যে গাড়ি চালাবে একজন, অথচ সেই গাড়ির এক্সেলেটরে আরেকজন মাঝে মাঝে নিজের খেয়াল-খুশি মতো চাপ দিতে পারবে? কোনো পরিবার বা প্রতিষ্ঠানে অর্থ সরবরাহ ব্যবস্থা হচ্ছে একটি গাড়ির জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থার মতো। গাড়ির ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহকে গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ করে এক্সেলেটরের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। তাই, পূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে ড্রাইভ করা না হলে, এ ধরনের এলোমেলো, বিক্ষিপ্ত ও পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক যৌথ পরিচালনার গাড়ি যে এক পর্যায়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবে তা হলফ করে বলা যায়।
এই বিষয়টিসহ এ রকম বহু বিষয়েই ইসলামী শরীয়াহ কিছুটা অনির্ণেয়তা বা ইনডিটারমিনিজম রেখে দিয়েছে। যেন লোকেরা নিজেদের যুক্তি-বুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পারস্পরিক সহানুভূতির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছুটা কম-বেশি করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে চলতে পারে।
যেমন, মা-বাবার সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব। মেয়েদেরকে এই দায়িত্ব থেকে রেহাই দেয়া হয় নাই। তো, শ্বশুর বাড়িতে থাকা কোনো মেয়ে কীভাবে নিজের বাবা-মায়ের সেবা করার দায়িত্ব পালন করবে? আবার, বউ যদি সহযোগিতা না করে তাহলে একজন ছেলে কীভাবে নিজের বাবা-মায়ের সেবা করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবে? কমনসেন্স থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, বউ যদি নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মান করে, তাদের উপযুক্ত সেবা করে তাহলে জামাইও তার শ্বশুর-শাশুড়িকে মর্যাদা দেয়া ও তাদের দেখাশোনা করার ব্যাপারে যত্মবান হবে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ব্যাপারটা এমনই তো হওয়ার কথা। ইসলাম এটাই চায়।
বলা বাহুল্য, সব কিছুকে তাই আইনের মাধ্যমে সমাধান না করে অনেক বিষয়কে ইসলাম সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, নৈতিকতা ও কাণ্ডজ্ঞানের ওপর ছেড়ে দিছে। স্ত্রীর উপার্জনের বিষয়টিও এ রকমেরই একটা ইস্যু।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সঙ্গত কারণেই কর্মজীবী নারীরা হয় অধিকতর শালীন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাদের মধ্যে মানবিক গুণের বিকাশ হয় অধিকতর হারে। সমাজ ও রাষ্ট্র সম্বন্ধে তারা হয় তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন। কথায় বলে, ‘যে রাঁধতে জানে, সে চুলও বাঁধতে জানে’।
কর্মস্থলের ছুটি ছাড়াও এমন দিন নিশ্চয় আপনার গেছে যে দিন আপনি ঘর থেকে কোথাও বের হননি। সেদিন দেখবেন, আপনার উদ্যম ও কর্মশক্তি অনেকখানি বাধাগ্রস্ত ও স্তিমিত। কেমন জানি জড়তা এবং আলসেমি আপনাকে পেয়ে বসেছে। এর বিপরীতে, আপনি যখন বাইরে যান বা খানিকটা ঘুরে আসেন তখন দেখবেন, ক্লান্তিবোধের সাথে সাথে আপনার মধ্যে সজীবতা ও কর্মোদ্যোমের বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। বুঝতেই পারছেন, সঙ্গত কারণেই কর্মজীবী কিংবা সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নারীরা আত্মকেন্দ্রিক গৃহবধূদের তুলনায় অধিকতর কনফিডেন্ট, কম্পিটেন্ট এন্ড প্রো-একটিভ হয়ে থাকে।
এসব কথা বলার কারণে কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমার কথাগুলো বাস্তবধর্মী, কিন্তু ব্যতিক্রমী। তাই তো একেকটা পয়েন্টকে ভেঙে ভেঙে আলোচনা করার মাধ্যমে পুরো বিষয়টাকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি।
সব মেয়ের চাকরি করতেই হবে, এমন কথা নাই। চাকরি করুক বা না করুক, মানুষ হিসাবে, আল্লাহর খলীফা হিসাবে, একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে সব নারীরই উচিত নিজ সংসার ও ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে দেশ ও দুনিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা। চিন্তাভাবনা করা। অন্যায় প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হওয়া। স্বীয় আদর্শের দাবি পূরণে যথাসম্ভব দৃঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
ফেইসবুকে লাইক, কমেন্ট করে ও পলিটিক্যালি সেনসিটিভ কথাবার্তা বলে কেউ যদি মনে করেন যে এর মাধ্যমে তার সামাজিক দায়িত্বপালন সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে, তিনি আসলে ভুল করছেন। বরং, প্রত্যেকেরই উচিত, সামাজিক ও সামষ্টিক দায়িত্বসমূহ পালনে মিনিংফুল, এফেক্টিভ ও কন্সিসটেন্ট ওয়েতে কর্মতৎপর হওয়া। বৃহত্তর অঙ্গনে সামাজিক ও সামষ্টিক দায়িত্বসমূহকে মূলত ছেলেদের কাজ মনে না করে সাধ্য মতো সোশ্যাল ওয়ার্ক করা কর্মজীবী ও অ-কর্মজীবী নির্বিশেষে প্রত্যেক নারীর একান্ত দায়িত্ব। ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে গিয়ে গণমানুষের জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য পার্সোনালি কন্ট্রিবিউট করার এই দায়িত্ব, একটি নাগরিক দায়িত্ব। মানবিক দায়িত্ব। নিজেকে তাই অবলা নারী হিসেবে না ভেবে, সব সময় স্মরণে রাখবেন, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবেন– “স্ত্রী ও মা হওয়ার পাশাপাশি, আমি একজন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মানুষ। আমিও একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিক। আমার অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতাগুলোই আমার জীবনের শেষ কথা নয়।”
‘আপা, আপনি কী করেন?’ উত্তর যদি হয়, ‘আমি সংসার করি, আর কিছু করি না’, তাহলে, সরি টু সে, একজন শিক্ষিত নারী হিসেবে আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত। কারণ, আপনি জাতিকে বঞ্চিত করছেন। ঠকাচ্ছেন। এ ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনামূলক পরিস্থিতি হতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনার উচিত, আপনার মতো করে সিরিয়াসলি কিছু না কিছু করে যাওয়া। কীভাবে আপনি দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা পালনের এই দায়িত্ব পালন করবেন, সেটার উপায়, পথ ও পদ্ধতি বের করা আপনার একান্ত ব্যক্তিজীবনের মতো আপনারই একান্ত দায়িত্ব।
হ্যাঁ, হতে পারে, আপনি মা হতে চলেছেন। তাই চাকরি করছেন না। হতে পারে আপনি পর পর অনেকগুলো সন্তানের মা হয়েছেন। তাদেরকে সামলাতে হচ্ছে। আমরা তো জানি, কষ্টের দিক থেকে বলেন, গুরুত্বের দিক থেকে বলেন কিংবা মর্যাদার দিক থেকে বলেন, মাতৃত্বের চাকরির চেয়ে তো বড় কোনো চাকরি নাই। কিন্তু, দেখা যায়, দুয়েকটা বাচ্চা নিয়ে কোনো কোনো শিক্ষিত মহিলা জীবন পার দিচ্ছেন। সংসার করা ছাড়া আর বিশেষ কিছু না করেই। এটি কখনোই একজন মুসলিম নারীর জীবন হতে পারে না। ইকামতে দ্বীন বা সামাজিক-আদর্শিক দায়িত্ব তো নারী-পুরুষ সকলের দায়িত্ব। এমনকি, এই দায়িত্ব কোনো যৌথ দায়িত্বও নয়। সামাজিক-আদর্শিক তথা নৈতিক দায়িত্ব, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। হাশরের ময়দানে প্রত্যেককে আল্লাহ তায়ালা স্বতন্ত্রভাবে জিজ্ঞাসা করবেন। ‘আমার জামাই ঘর হতে বের হতে দেয় নাই’ বা ‘তিনি পছন্দ করতেন না’, বা ‘নিজের বাচ্চাদেরকেই সব সময় দিয়েছি’– এ ধরনের কথা বলে পার পাবেন না, নিশ্চিত থাকেন।
কর্মজীবী নারীদের প্রতি তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সোনার ডিম পাড়া হাঁসের প্রতি মানুষের যেমন যত্নশীল হওয়ার কথা, কর্মজীবী নারীদের সাথে তাদের স্বামীদের আচরণও তেমনই ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু, জানি, এটি নিছকই তত্ত্বকথা। বাস্তবতা অনেকখানি ভিন্ন। বিরূপ। এই বিরূপতার বর্ণনা দেয়া ও করণীয় সম্পর্কে নসীহত করার পরিবর্তে একজন কর্মজীবী স্ত্রীর স্বামী হিসাবে আমার জীবনধারা সম্পর্কে দুয়েকটা কথা বলা সমীচীন মনে করছি।
আমি যথাসম্ভব নিজের কাজগুলো নিজে করার চেষ্টা করি। লবণ খেতে পারি না। ঝাল হজম হয় না। এ ছাড়া খাওয়ার মেন্যু নিয়ে কখনো উচ্চবাচ্য করি না। সহযোগিতামূলক কোনো কিছু পেলে আলহামদুলিল্লাহ! না পেলেও চুপচাপ থেকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করি। অথবা অপেক্ষা করি। হাতের কাছে কোনো কাজ থাকলে সেটা সেরে ফেলি। ‘এটি পুরুষ মানুষের কাজ নয়’– সাংসারিক কোনো কাজ সম্পর্কে এমনটা মনে করি না। এর মানে অবশ্য এই নয় যে আমি সব কাজ করি। বরং, এক্ষুনি যা বললাম, এটি মনে করি যে, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত হলো নিজের কাজগুলো যথাসম্ভব নিজেই সম্পন্ন করা। পরনির্ভরশীলতা ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচায়ক। পরনির্ভরশীলতা আর ভালোবাসা এক নয়। সংসার জীবনে ভালোবাসা একটা ফাও কথা। থাকলে ভালো। না হলেও অসুবিধা নাই তেমন। দায়িত্ব পালন ও অধিকার আদায়ই মূল কথা। আবেগী রোমান্টিকতা দিয়ে হানিমুন হয়, সংসার হয় না।
কর্মক্ষেত্র একই হওয়ার কারণে আমি ও আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন না পড়লেও একজন কর্মজীবী নারী হিসাবে আপনার উচিত, আপনি কখন কোথায় যাবেন, যাচ্ছেন, কতক্ষণ থাকছেন, কখন ফিরবেন ইত্যাদি বিষয়ে স্বামীকে অবহিত রাখা। তিনি জানতে না চাইলেও। এটি পারস্পরিক আস্থার জন্য জরুরি। সব সময় নিজের প্রাইভেসিকেই যদি আপনি প্রায়োরিটি দেন তাহলে হতে পারে তিনি আপনার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়বেন। ফলে তিনি সংসার করার জন্যই সংসার করবেন। তার পৌরুষত্বকে গুটিয়ে নিবেন। পুরুষের পৌরুষত্ব, ইংরেজিতে যাকে শিভলারি বা ম্যাসকিউলিনিটি বলে, আমার ধারণায় স্বাভাবিক রুচিসম্পন্ন নারীদের দৃষ্টিতে এটি কোনো পুরুষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। পৌরুষত্বকে দমিয়ে রাখা এই অবনমিত চরিত্রের স্বামীর সংসারে বাচ্চারা ঠিক মতো গড়ে উঠবে না। স্বামী-স্ত্রীর বিরূপ সম্পর্কের প্রতিক্রিয়ায় তারা নানা ধরনের মানসিক জটিলতার শিকার হবে। আপনি নিশ্চয়ই এটি চান না।
সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য বিয়ের আগে মেয়ের চাকরি ইত্যাদি বিষয়ে কথাবার্তা সব ভেংগে নিতে হবে। প্রয়োজনে সেগুলো লিখিতও হতে পারে। এতে ধর্মীয় কোনো বাধা নাই। এটি বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার মতো। তদুপরি, কুফু বা বিয়েতে সমতার যে কথা বলা হয়েছে, তা বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কারণে তা না হলেও ঘরের মধ্যে নিজেকে প্রফেশনাল হিসাবে ভাব দেখানোর পরিবর্তে হযরত খাদিজার (রা) মতো পারিবারিক আবহে মমতাময়ী ইমেজ বজায় রাখতে হবে।
তাও সম্ভব না হলে নিত্যদিন ঠোকঠুকি করে ভুল মানুষের সাথে দুঃসহ জীবন কাটানোর পরিবর্তে নিজ জীবন সম্পর্কে ‘কঠোর’ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রয়োজনে বিয়ে। বিয়ের জন্য জীবন নয়। চাকরিজীবী নারীদের পুনর্বিবাহে তো তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়, তাদের প্রত্যাশা যদি অতি উচ্চ না হয়।
এ বিষয়ে এবার অন্যদিকের কিছু কথা বলি। নারীর ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ সংরক্ষণ ও সংসারে সুখের জন্যেই তো নারীদের চাকরি ও আয়-উপার্জন। তা না হয়ে, বিলাসিতা বা বাহুল্য ব্যয়, স্বামীকে পাত্তা না দেয়া ও লাগামহীন ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চা যদি হয় চাকরিজীবী কোনো অ্যাম্পাওয়ার্ড নারীর আচরণগত বৈশিষ্ট্য, তাহলে বলতে হয়, তিনি পাশ্চাত্যের উগ্র নারীবাদী এনজিও-প্রচারণার ফাঁদে পড়েছেন। তাকে আমার আর কিছু বলার নাই। তিনি আর আমি পরস্পরবিরোধী পক্ষ।
আদর্শগত দিক থেকে যিনি যে পক্ষেই থাকুন না কেন, সমাজ পরিবর্তনের এই চলমান আন্দোলনে অবশেষে আমাদের দেখা হবে ময়দানে। আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করেছি। আপনি কোন পক্ষ নিবেন সেটা আপনার নিজস্ব বিবেচনা। নিজের ব্যাপারে বলতে পারি– স্বার্থপর, ভীরু ও নিষ্ক্রিয় স্বপক্ষীয়দের চেয়ে বিরোধী পক্ষের সক্রিয় ও সিনসিয়ার অ্যাক্টিভিস্টদেরকে আমি বেশি আপন মনে করি। আদর্শিক সক্রিয়তার দিক থেকে, মৃতদের মধ্যে সুখে থাকার চেয়ে জীবিতদের মধ্যে আমি বেঁচে থাকতে চাই। হোক সেটা শান্তিতে কিংবা সংগ্রামে।
আমার জন্য দোয়া করবেন। একজন সত্যনিষ্ঠ সমাজকর্মী হিসেবে আপনার জন্যও রইল আমার শুভেচ্ছা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা। ভালো থাকুন, এই বিশ্বজগতের একমাত্র সভ্য প্রজাতির তেমনই যোগ্য ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন মানবিক মানুষ হিসেবে।
ফেইসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Saifuddin Mahmud Plabon: বর্তমান জীবনযাত্রায় মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। তা না হলে পশ্চিমাদের থেকে আমরা ২:১ রেশিওতে পিছিয়ে থাকবো। কারণ, তাদের সমাজে নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সাথে যেভাবে অংশ নেয়, মুসলিম সমাজে এখনো তা হয় না।
এছাড়া মধ্যবিত্ত সমাজে বাবার পাশাপাশি মায়ের উপার্জন থাকলে সচ্ছলতা আসে, আমরা সন্তানরা আমাদের বিভিন্ন সখ-আহ্লাদ মায়ের মাধ্যমে পূরণ করতে পারি, যেহেতু বাবার উপার্জনের পুরো টাকাটা সংসার-ফোকাসড থাকে।
তবে স্যার এখানে কিছু রিয়েলিটিও বিদ্যমান। যেমন আমার বড় হওয়া ৯০ দশকে দেখেছি, আমাদের কোনো বন্ধুর মা চাকরি করলেও আমার বন্ধুটি তার একই পরিবারে চাচী, জেঠী, দাদীদের কাছে উক্ত গ্যাপকালীন সময়ে টেককেয়ার পাচ্ছে। কারণ, সমাজে তখন সব মেয়ে চাকরি করতো না এবং যৌথ পরিবার ছিলো। ফলে কোনো একজন নারী চাকরি করলে পরিবারের অপর নারী সেটা কভার দিয়ে দিতো।
এখনকার নারীদের যৌথ পরিবারে একসাথে থাকার প্রবণতা কম। কোনো গৃহবধু চাকরি করলে তার সন্তানদের বড় হতে হয় বুয়া আয়াদের কাছে।
আমারই এক কলিগের পরিবারে তার স্ত্রী, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, বাবা, মা সকলে চাকরি করে। শুক্রবার ছাড়া সকলের একসাথে তেমন খাওয়া হয় না। সেই কলিগ এবং তার ভাই এই কারণে এখনো সন্তান নিচ্ছে না। কারণ, এই বাচ্চাকে তারা সময় দিবে কীভাবে?
এসব কারণে ইস্যুগুলো নিয়ে আমি খুব কনফিউজড।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কর্মক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ করার সুবিধা এবং অসুবিধা দুই-ই আছে। নারী সমাজ তথা অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাইরের কাজ থেকে বিরত রাখলে পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ন, সোজা কথায় জনসম্পদ বৃদ্ধির ব্যাপারটাতেও তাদের মতো নেতিবাচক গণনায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া আমাদের যেসব নারী বাহিরে আয়-উপার্জন করে না, তারা যে প্রোডাক্টিভ কোনো কাজ করে না এমন তো নয়। অপরদিকে নারীরা আয়-উপার্জন না করলে তাদের পজিশন কী হতে পারে, সেটা তো মূল পোস্টে বেশ খানিকটা আলোচনা করা হয়েছে। অতএব ব্যাপারটা একতরফা কিছু নয়। এ ব্যাপারে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই হতে পারে একমাত্র ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান।
কর্মজীবী মায়েদের প্রবণতা থাকবে আত্মীয়-স্বজনকে কাছে রাখার। কেননা, একক অনু-পরিবারের চেয়ে যৌথপরিবার ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে বাচ্চাদের লালন-পালনে সহায়ক।
কাজের বুয়ার কাছে বাচ্চা রেখে গেলে কী অসুবিধা হয় সেটা তো আমরা জানি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, গৃহবধূরা বাচ্চার প্রতি খুবই কেয়ারিং। সামাজিক কোনো ব্যবস্থা মানেই হলো, এর সুবিধা এবং অসুবিধা দুইটাই থাকবে। এরই মধ্যে যার যার হিসাব মতো মানুষ স্বীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করে।
কেউ কাউকে বেশি সময় দিলে সেটি যে অনেক বেশি এফেক্টিভ হবে এমন নয়। বরং সময়টা কতটুকু কোয়ালিটেটিভ হলো সেটাই বড় বিষয়।
Arafat Hossen Mamun: খাদিজার (রা) ইসলাম পূর্ববর্তী জীবন আর পরবর্তী জীবনের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য ছিলো? আয়েশা (রা) ও ফাতেমাদের (রা) জীবন সম্পর্কেও আলোচনার প্রয়োজন আছে কি? উনাদের জ্ঞানচর্চা ও জীবনাদর্শের বাস্তবায়ন বর্তমান সমাজের আলোকে কতটুকু জরুরি? এই পোস্টের আলোকে জানতে চাচ্ছিলাম।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে বিয়ের পরে খাদিজা (রা) ব্যবসা-বাণিজ্য সব ছেড়ে দিয়েছিলেন, এমনটা যারা মনে করছেন তাদের এ কথা বা ধারণার উৎস কী? জানতে চাইছি।
লক্ষ্য করেছি, ইসলামপন্থীদের নারী অধিকার সংক্রান্ত আলোচনায় খাদিজার (রা) কথা তেমনভাবে আসে না। অথচ তাঁকে বলা হয়েছে দ্যা গ্রেট খাদিজা। এটি শুধু উম্মুল মুমিনীন হিসেবে সিনিয়র হওয়ার কারণে নয়। বরং এটি তাঁর অবদান ও গুণের কারণে। তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে।
অনুসরণীয় সব নারীর সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে একসাথে করে সেখান থেকে একটা গড়পড়তা মান বের করে, এরপর সেই ফরমেট অনুসরণ করে সবার নিজ নিজ জীবন গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত– এই ধরনের একটা অনুচ্চারিত প্রবণতা লোকজনের মধ্যে লক্ষ করা যায়। স্পষ্টত এটি ভুল ও অবাস্তব ধারণা।
সঠিক পন্থা হলো, অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গের কারো না কারো মতো করে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ইসলাম অনুসরণ করতে আগ্রহী নারীরা আয়েশা (রা) এবং ফাতেমার (রা) মতো হওয়ার চেষ্টা কম-বেশি করেছে। আমি চাচ্ছি, তারা বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা খাদিজার (রা) মতো হওয়ার চেষ্টা করুক। এটি তাদের জন্য বেটার, আই থিংক।
Aminul Islam Rifat: কেউ যদি আখিরাত কম্প্রোমাইজ করে দুনিয়াকে বা দুনিয়াবি বিষয়াদিকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি দেয়, মানে তার সব কাজকর্মের মূল ফোকাস থাকে দুনিয়া (ক্যারিয়ার, বাড়ি, গাড়ি, ব্যালেন্স, ফ্লাট ইত্যাদি), আখিরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার জান্নাতে (যেমন– জান্নাতুল ফেরদাউস) যাওয়ার বদলে ‘নরমাল লেভেলের জান্নাতের কোনো একটা হলেই চলবে’ টাইপের অনুচ্চভিলাসী হয় পরকালের ব্যাপারে, তাহলে দাম্পত্য কলহ রুখতে তাদের এভাবেই ম্যানেজ করতে হবে।
কিন্ত যদি অর্থোডক্স ইসলাম পালন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার এই কথা মানতে হবে যে ইসলাম বোনের হক দেয়ার ক্ষেত্র যতটা উৎসাহিত করে, মেয়েদের জব করাকে ততটাই অনুৎসাহিত করে। খাদিজার (রা) ব্যবসা, আয়েশার (রা) জ্ঞানার্জন– এসবের রেফারেন্স দিয়ে অনেকে বুঝাতে চান, এটাই বেস্ট পজিশন। কিন্ত আসলে তা নয়। আপনি অবশ্যই এটাও জানেন যে নবীজি (সা), তাঁর সাহাবীগণ এবং সালাফদের আত্মমর্যাদা এতটাই ছিলো যে তারা চাইতেন না তাদের স্ত্রীদের চেহারা অন্য কোনো পুরুষ দেখুক। নারী সাহাবীরাও পর্দার ব্যাপারে এতটাই সিরিয়াস আর আত্মমর্যাদাবান ছিলেন যে তাদের চেহারাটুকুও কাউকে দেখতে দিতেন না।
এখন বলতে পারেন, দুনিয়াকেন্দ্রিক হতে দোষ কোথায়, চেহারা দেখানো তো জায়েজ, মহিলাদের জব করাটা জায়েজ। আমি এসব নিয়ে তর্ক করতে চাই না। আমি জাস্ট ইসলামের মূল শিক্ষা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) যেটা আমাদের জন্য পছন্দ করেছেন, সেটা তুলে ধরলাম। যার যেটা খুশি বেছে নিক। যেইটা যার খুশি ফোকাসে রাখুক– দুনিয়া বা আখিরাত। এক বিকেল পরিমাণ সময় বা অনন্তকাল।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনাকে আমি সংক্ষেপে কয়েকটা কথা বলছি, যা আপনি উদার মনে কনসিডার করবেন, আশা করি।
আপনি যদি মেয়েদের এত বেশি লেখাপড়া এবং চাকরি করাটাকে সুন্নাহর খেলাফ বলে মনে করেন, তাহলে আপনার উচিত হবে উচ্চশিক্ষিত কোনো নারীকে বিয়ে না করা। বউ লেখাপড়া জানে না, এটি যাতে আপনার ইগোতে না লাগে। শফি হুজুরের নসিহত আপনার জন্য অনুসরণীয়।
তবে আপনাকে একজন ভাই হিসেবে একটা কথা বলতে চাই। ইসলাম নারীদেরকে যে সুযোগ-সুবিধা, অধিকার ও অবকাশ দিয়েছে, সেগুলো যেন আপনার পরিবারের নারীদের ব্যাপারে আপনি কড়ায়গণ্ডায় আদায় করেন। ঠিক কোরআন-সুন্নাহতে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই। তাহলে বুঝা যাবে, আপনার বুঝজ্ঞানের ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত।
Aminul Islam Rifat: জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ, আমার উচ্চশিক্ষিতা অথবা শিক্ষিতা যে চাকরি করতে চায়, এদের বিয়ে করার স্বপ্ন নেই। তবে শিক্ষিত এমন কেউ, যে মন থেকেই চায় না চাকরি করতে, তাকে বিয়ে করতে সমস্যা দেখি না। আমার বউ লেখাপড়া জানে না– এটা আমার ইগোতে লাগবে না, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আপনি সোজা কথায় ‘লেখাপড়া জানে না’ এমনভাবে চালিয়ে দিলেন যে ব্যাপারটা কিছুটা একপেশে হয়ে গেলো। আপনি চোখ বুলালে দেখবেন, অনেক কলেজ/পাবলিক ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যারা একসময় মাথায় একটা কাপড়ও দিতো না, তারা স্বেচ্ছায় হাতমোজা, পা মোজাসহ একদম নিখুঁত হিজাব বেছে নিয়েছে, এবং এমন কাউকে খুঁজছে যে তার পর্দার ব্যাপারে হেল্প করতে পারবে। ইভেন এদের অনেকে ফ্যামিলি ত্যাগ করে নিজের ইচ্ছায় দ্বীনদার ছেলেদের বিয়ে করছে। আপনি জানেন হয়তোবা, প্রায় সব মাজহাবে এই ব্যাপারটা জায়েজ। তারপর মাদ্রাসা পড়ুয়া এবং এই পড়াশোনাকে মন থেকে ভালোবাসে এবং কখনোই চাকরি করতে চায় না, এ রকম অসংখ্য মেয়ের কথা বাদই দিলাম।
আমার বোন নেই, থাকলে অবশ্যই হক পূরণ করতাম, ইনশাআল্লাহ। আর মায়ের হক? আম্মু বললে তার কাপড় চোপড়ও ধুয়ে দিতাম। কিন্ত আম্মু চায় না। তবে মাঝেমাঝে তার কাপড় শুকিয়ে দেই। এই টুকটাক আরকি।
আরেকটা কথা আপনাকে বলতে ইচ্ছা করছিল। আমরা যেন দ্বীনকে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ব্যাখা না করি, বা জায়েজ ব্যাপারটাকে উত্তমের জায়গায় ইউজ না করি। যেইটা জায়েজ সেটাকে জায়েজ হিসেবেই বলি, যেইটা উত্তম সেটাকে উত্তম ই বলি। জায়েজকে উত্তমের জায়গায় প্লেস করলে তো সমস্যা। এতে ঈমান নষ্ট হবার বা দ্বীন বিকৃত হবার চান্স থাকে। এটা আপনার ব্যক্তিগত শুভানুধ্যায়ী হিসেবেই বললাম, ভাই হিসেবে।
প্যান্ট-শার্ট পড়লেও যেনো ভাবি, সুন্নতি লেবাসটাই বেটার। আমি নিজে প্যান্ট-শার্ট পড়ি, কিন্ত ভাবি যে সুন্নতি লেবাসটাই বেটার। স্যার, সহজ কথায়, আমি আমার ব্যাক্তিগত পছন্দকে দ্বীন দিয়ে জাস্টিফাই করি না বা দ্বীনকে পাশ্চাত্য বা লিবারেল হিউম্যানিজমের স্টান্ডার্ড দিয়ে ভাবি না। কারণ, এই স্টান্ডার্ডটাও চাপিয়ে দেয়া, বরং মাঝেমধ্যে এই স্টান্ডার্ডকেই প্রশ্ন করি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: লেখাপড়া করেও চাকরি করতে চায় না– এ রকম প্রচুর মেয়ে আছে। ইনফ্যাক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনারত মেয়েদের অধিকাংশই লেখাপড়া করছে শিক্ষিত একটা ছেলের সাথে ভালো বিয়ে হওয়ার জন্য। এটা তো মূল লেখাতেই আমি মেয়েদের রেফারেন্সে উল্লেখ করেছি। এবং সেখানেই আমার আপত্তি। আমি বলেছি, শিক্ষা সবার অধিকার বটে, কিন্তু উচ্চশিক্ষার ব্যাপারটা দেশের চাহিদা ও বিদ্যমান অবকাঠামো উপর নির্ভর করছে। শুধু শখের বশে কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে, সেটা নৈতিকতার দিক থেকে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য বিশেষ করে।
দ্বিতীয়ত: সুন্নতি পোশাক জিনিসটা আসলে কী, সেটা আমার জানা নাই। আমি শুধু জানি, মুসলমানদের সুন্নতি পোশাক দুটি: একটি হলো হজের জন্য এহরাম, আর অপরটি মৃতের জন্য কাফনের পোশাক। এছাড়া আমি যতটুকু জানি তা হলো, পোশাক পরার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যেসব সীমা-পরিসীমা ও মূলনীতি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে অক্ষুন্ন রাখা সাপেক্ষে যে কোনো পোশাকই হতে পারে সুন্নতি পোশাক। আপনি যদি পাজামা-পাঞ্জাবিকে সুন্নতি পোশাক বলে মনে করেন, তাহলে ভুল করছেন। যে কোনো হাদীসের কিতাব খুলে ‘কিতাবুল লেবাস’-এর অন্তর্গত হাদীসগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
পরিশেষে, শালীন ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং সেজন্যই আমি এখানে আবারো রেসপন্স করেছি।
Aminul Islam Rifat: আচ্ছা, ধন্যবাদ স্যার।
Anamul Haque Humaid: ১। অত্যন্ত সুন্দর একটি আলোচনা। তবে চাকরি না থাকলেই নারীরা স্বাবলম্বী নয়– এইগুলো বাইরের চাপের প্রভাবে আমাদের জ্ঞানগত পরিবর্তন। প্রত্যেকে মাসে বা স্ত্রীর প্রয়োজনের সময় স্বামী অর্থ দিবে (ঈদের বিলাসিতায় নয়, দামী গ্যাজেটেও নয়), এটা সাধারণ নিয়ম। এটা না দিলে স্বামীর পকেট থেকেও অর্থ নিতে পারবে স্ত্রী, তবে বেসিক ও মৌলিক প্রয়োজনটুকুই কেবল।
২। বাইরে কাজের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় মূলত নারীর সিকিউরিটির কারণেই, অর্থনৈতিক কারণে নয়। সাহাবীদের স্ত্রীগণ কি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি? করেছেন, তবে সিকিউরিটির ভেতরে থেকে। ২০ টাকা লাভের চাইতে ১০ টাকা লস দিয়েও, সংসার মোটামুটিভাবে চললেও, সেখানে স্ত্রীর সিকিউরিটি ও অন্তরের প্রশান্তি প্রধান ও প্রায়োরিটি ইস্যু।
৩। ঘরের বাইরেই কি চাকরি করতে হবে? না। ঘরে থেকেও স্বামীর অর্থনৈতিক কাজে হেল্প করে, দুজনেই সংসারে ভালো করেও অবদান রাখা যায়। কেবল বাইরেই চাকরি বা ব্যবসার কথা কেন আসে? খাদিজা (রা) বা নবীর স্ত্রীগণ বাইরে এই কাজ কখনো করেননি।
৪। খাদিজা (রা) কি ব্যবসায়ী ছিলেন? বাইরে দর কষাকষি করেছেন? উভয়টিই না। তিনি মূলত এন্ট্রেপেনুরিয়াল ছিলেন। ইনভেস্টমেন্ট করতেন। চাকরিও করতেন না, আবার বিজনেসও করতেন না সেই হিসেবে। মানে সিকিউরিটি ইস্যুতে তিনি বাইরে যেতেন না। আবার তাঁর ইনভেস্টমেন্ট ইস্যুতে একটা বিষয় সবাই (নারী-পুরুষ যারাই উদাহরণ টানেন) এড়িয়ে যান, অর্থাৎ, রাসূলের (সা) সাথে তাঁর দীর্ঘজীবনের প্রসঙ্গ যেন নাই হয়ে যায়!! রাসূলের (সা) সাথে বিয়ের পর তিনি নিজে ব্যবসা চালান নাই। এই সময় রাসূলের (সা) অর্থের উৎস কী ছিলো, তা সাধারণত কেউ বলেন না। মানে তাঁকে বিয়ে করার আগে-পরে আল্লাহর রাসূলের (সা) কষ্টের কথা সাধারণত বলা হয়, কিন্তু খাদিজার (রা) সাথে বিয়ের পর আর কোনো অর্থনৈতিক কষ্টের বর্ণনা আমরা পাই না। কারণ, তাঁর সকল অর্থ স্ত্রী দিতেন। খাদিজার (রা) বিয়ের পর তাঁর চাচাতো ভাই ব্যবসা চালাতেন, আর তিনি পুরো সময় স্বামীকেই দিতেন (না, দাঈ নবী এবং স্বামীকে)।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ১। চাকরি না থাকলে নারীরা স্বাবলম্বী নয়– এটি চিরন্তন কোনো কথা নয়। আমার লেখাতেই বলেছি, এটি এখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে। আমি উল্লেখ করেছি, নারীদেরকে আর্থিক স্বচ্ছতা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ইসলাম যে মোহরানা, উত্তরাধিকার সম্পত্তি ইত্যাদি দিয়েছে, সেগুলো থেকে তাদেরকে একেবারেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়গুলোকে নিছক খেলো বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সেজন্য ইমিডিয়েটলি নারীদের অবস্থা উন্নয়নের জন্য চাকরির মাধ্যমে আয়-উপার্জনের দিকে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
২। হ্যাঁ, নিরাপত্তা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে নারীদেরকে গৃহবন্দী যারা করতে চায় তাদেরকে আমি রাসূলুল্লাহর (সা) সেই হাদীসটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যাতে তিনি বলেছেন, ‘একদিন এমন সময় আসবে, যখন সানআ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত একজন নারী একাকী ভ্রমণ করবে। কিন্তু আল্লাহ ও বন্যপশু ছাড়া কাউকে ভয় করবে না।’
ইসলামপন্থীরা নারীদের উপর অবরোধ আরোপ না করে পরিবেশের উন্নয়ন কেন করছে না, সেটা আমার প্রশ্ন। তাছাড়া যারা সব সময় জবুথবু হয়ে থাকতে চায় তারা কখনো ভাবতে পারে না– শহরে, বন্দরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে বিশেষ করে শহরে নারীরা তুলনামূলকভাবে কত বেশি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই সমাজব্যবস্থাকে মিনিমাম লেভেলে কলুষমুক্ত না করে নারীদেরকে ঘরের মধ্যে অন্তরীণ করে রাখলেই যে তারা নিরাপদে থাকবে, এমনটা কি বলা যায়?
৩। আমার এ কথাগুলো মূলত শহুরে শিক্ষিত নারীদের জন্য। গ্রাম্য নারীরা ঘরে থেকেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পূর্ণমাত্রা অংশগ্রহণ করে, সেটা আমরা জানি।
৪। আপনার এই পয়েন্টের উত্তরে উপরের একজনের মন্তব্যে বেশ কিছু কথা বলেছি। সেটা এখানে বলে আর বিরক্তি করছি না। শুধু এতটুকু জানতে চাইছি, ‘বিয়ের পর তাঁর চাচতো ভাই ব্যবসা চালাতেন’– এই কথাটার রেফারেন্স কী? আপনার ভাষায়, নারীরা হযরত খাদিজার (রা) মতো উদ্যোক্তা হতে পারবে, কিন্তু ব্যবসা করতে পারবে না বা করবে না। এ কথাগুলো কি কন্ট্রাডিক্টরি হলো না? রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে আপনি লিখেছেন, ‘সকল অর্থ স্ত্রী দিতেন’। ভালো কথা। বউয়ের টাকায় চলা যাবে, সমাজ সেবা করা যাবে, এমনকি বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া যাবে। এটি আসলেই ভালো কথা। ছেলেদের জন্য বেশ সুবিধার কথা। এ রকম স্ত্রী পেলে অনেক আদর্শবাদীরাই বেঁচে-বর্তে যাবে, ধারণা করতে পারি। অবশ্য আমি মেয়েদেরকে হাউজ-হাজবেন্ড পালার জন্য বলছি না। বরং হাজবেন্ডকে সহায়তা করা, তারচেয়ে বড় হলো, নিজের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। যদি তারা লেখাপড়া করার মাধ্যমে আয় উপার্জন করার উপযুক্ত হয়ে থাকে।
Sajib Das: লিখাটা ভালো লাগলো স্যার। ♥️
আমার মতে, অধিকাংশ নারীর সুবিধাবাদী মনমানসিকতার কারণে তারা উচ্চশিক্ষাকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার গরজ অনুভব করেন না। তারা শুধুমাত্র নিজের সুবিধার জন্য উচ্চশিক্ষাকে শুধুমাত্র একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। আর ধর্ম, সমাজ, পরিবার ইত্যাদির দোহাই দিতে থাকেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তোমার সুন্দর মন্তব্য দেখে বেশ ভালো লাগছে।
Sajib Das: ধন্যবাদ স্যার।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: লেখাটাতে কিছু বিষয় আছে যেগুলো ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পর্কিত। তৎসত্ত্বেও মূল বিষয়টা সবার জন্য প্রযোজ্য বলে মনে করি। ভুলের মধ্যে থাকা লোকদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য স্পেসিফিক এবং টু দ্যা পয়েন্টে কথা বলতে হয়। আবার কোনো লেখাকে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করতে হলে কথাগুলোকে বলতে হয় আনস্পেসিফাইড এবং ওভারঅল অ্যাপ্রোচে। নিরপেক্ষভাবে কিছু নীতি কথা হিসেবে কোনো সামাজিক সমস্যার কথা বললে ভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত ব্যক্তিরা মনে করে– কথাগুলো তো সত্য, তবে আমাকে তো বলা হয় নাই! ফলে, একটা সমস্যার যে টেকসই সমাধান কাম্য, তা আর হয়ে ওঠে না। লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য যে সমাজ পরিবর্তন, তা কঠিনতর থেকে যায়। কীভাবে লিখব, তা নিয়ে তাই মাঝে মাঝে এ ধরনের উভয় সংকটে পড়ি।
Dilshad Hamida: পড়ে ভালো লাগলো। কিন্তু প্রথাগত চাকরির সময়সীমা এবং চাকরির দায়বদ্ধতা রক্ষার পরে পরিবারকে দেয়ার মতো একজন নারীর কতটুকু সময় থাকে সেটাও দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে পুরুষের দায়িত্বই বেশি চাকরিজীবী বা চাকরি না করা নারীদের পূর্ণ আর্থিক ও সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।
আর উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বরাবরই ভুল পথে আছে। উচ্চশিক্ষা আসলে নারী বা পুরুষ কারো জন্যই জরুরি নয়। কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো চাকরি হয় না। তাছাড়া অকারণে উচ্চশিক্ষায় সবাইকে ইনক্লুড করা হয়। এটা ভুল পদ্ধতি। এইজন্যই জনসংখ্যা অনুসারে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি কম। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকার মতো দেশে খুব কম লোকই উচ্চশিক্ষা নেয়। কারণ, ওরা এটাকে মূল্যায়ন করে। আর আমাদের দেশে সবাই উচ্চশিক্ষিত বেকার।
সুতরাং, যেসব মেয়ে উচ্চশিক্ষার পরে চাকরি করে না তারা দোষ করে, এটা মানতে আমি নারাজ।
Shayer Shofiqur Rahman: ইংরেজিতে একটি Proverb আছে:
Man may work from sun to sun,
But woman’s work is never done.
হ্যাঁ, মায়েদের কাজ কখনো শেষ হয় না। সপ্তাহে সাত দিনই, যত ঘণ্টাই লাগে। মায়েরা এই কাজগুলো স্বীকৃতি পাবার জন্য করে না বটে, কিন্তু তাদের কাজের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ এবং একটু কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে সাহায্যের প্রচেষ্টা অবশ্যই ভালো লাগায় আর উৎসাহ এনে দেয় তা সুনিশ্চিত।
ইদানীং, ফেইসবুকে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি দেখি। বিশেষ করে আমরা পুরুষরা মায়েদের এবং স্ত্রীদের এই অক্লান্ত কাজকে কাজ মনে করি না, অফিস কিংবা ঘরের বাহিরের কাজকেই কাজ মনে করি ইত্যাদি।
আমরা যে সকল পুরুষরা এভাবে ভেবে থাকি, তারা ভুলে নিমজ্জিত এবং অবশ্যই আমাদের এমন ধ্যানধারণা পরিবর্তন করে ইসলামের নারীর এমন সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার সুরক্ষা ও সুনিশ্চিত করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এর সাথে অভিন্ন মত পোষণ করছি।
কিন্তু, আজ আমি টেবিলটা ঘুরিয়ে দেই। আপনারা কয়জন মেয়ে আছেন যারা সাংসারিক এই কাজকে কাজ মনে করেন?
প্রায় মেয়েরই ধারণা– আমি এতো পড়াশোনা করে শুধু সংসার করবো! কোনো কাজ করবো না! নিজের আলাদা ক্যারিয়ার হবে না! কেন বোন, সাংসারিক কাজকে কি আপনার কাজ মনে হয় না? সাংসারিক কাজ যথাযথভাবে পালন করতে পারা কিংবা যথাযথভাবে পালন করতে পারার চেষ্টাটা কি তুচ্ছ? বাইরের সে অফিস, জবের চেয়েও তুচ্ছ? একটা শিক্ষিত মেয়ে যখন পড়াশুনা শেষে চাকরি না করে পুরো সময় সংসারে দিতে চায় তখন তারই বন্ধু-বান্ধবী, আপনজনসহ অনেকেই নাক সিটকায়। তুচ্ছতাচ্ছিল্যের এ শ্রেণির কারণেই আজ তাই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটাতে বর্তমানে ব্যর্থতার ছড়াছড়ি।
যে পশ্চিমারা আপনাকে Women Empowerment-এর নাম করে যাচ্ছেতাই ভাবায়, অনুরোধ করি একটু চোখ-কান খোলা রেখে সেই পশ্চিমাদের দিকে তাকান; সেখানে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তাই তাদের নীতি-নৈতিকতাও ভেঙ্গে পড়ছে। বয়স ১৮ হলে সন্তানের ভালো-মন্দে আপনার হস্তক্ষেপ নিষ্প্রয়োজনীয়, প্রয়োজনবোধ করলে তারাই আপনাদের ছেড়ে চলে যাবে এবং বৃদ্ধ অবস্থায় আপনাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে ঘটা করে Father’s Day, Mother’s Day পালন করবে। প্রতিদিনই তো করা লাগে না, বছরে একবার মাত্র!
এক সময়ের স্লোগান ছিল, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা এনে দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি এনে দিব।” মায়েরা শিক্ষিত হচ্ছে তাই জাতিও শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি কি হচ্ছে? তাই বলতেই হচ্ছে, তুমি আমাকে শিক্ষিত ও নৈতিকতাসম্পন্ন মা এনে দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত ও নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি এনে দিব ইনশাআল্লাহ।
যারা নাক সিটকায় কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখেন, তাদের ভেবে দেখা উচিৎ– আপনার সময় এবং প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় হকদার আপনার পরিবার, যে পরিবারের গুরুত্ব সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে। তাই সমাজের আজ যে অসংগতি তার দিকে আঙ্গুল তুললে আঙ্গুলটা এক পর্যায়ে পরিবারে গিয়েই থামে। পরিবারকে সুন্দর করে গড়ে তোলা মানে সে MLM Business-এর মত যার লাভ চতুর্দিকে। একটি পরিবারকে সুন্দর করে গড়ে তোলা মানে একটি সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। তাই পরিবারকে যথাযথ সময় দেয়া মানে দেশকে সময় দেয়া, জাতিকে সময় দেয়া। আর তাই এ গড়ে তোলার কাজটা একজন চতুর্দিকে ব্যস্ত মায়ের চেয়ে বরং পরিবারে সময় বেশি দেওয়া একজন শিক্ষিত ও নৈতিকতাসম্পন্ন মায়ের চেয়ে আর কে ভালো পারবে??
শেষ করছি মুফতি তাকি উসমানীর একটা কথা দিয়ে: “আশ্চর্য! তামাশার বিষয় এই যে, নারী যখন ঘরে বসে স্বামী-সন্তানদের সেবা করে, ঘরদোর সাজায় তখন সেটা হয় পশ্চাৎপদতা ও মৌলবাদিতা। অথচ এই নারীই যখন বিমানবালা হয়ে, চারশত পুরুষের জন্য ট্রে সাজিয়ে খাবার সরবরাহ করে, আর তাদের লালসা-দৃষ্টির শিকার হয় তখন সেটা হয় সম্মান ও মর্যাদা!”
আল্লাহ আমাদের বুঝার ও মানার তৌফিক দিন। আমিন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: খড়কুটা দিয়ে প্রতিপক্ষের একটা মূর্তি বানিয়ে সেটাকে ধ্বংস করা এবং এর মাধ্যমে অপর মতকে খণ্ডন করার দাবি করা অর্থাৎ, অপরের যুক্তিকে মূল পয়েন্ট থেকে কিছুটা সরিয়ে এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করা বা তুলে ধরা, যাতে করে সেটাকে সহজেই খণ্ডন করা যায়। এটাকে স্ট্র-ম্যান ফ্যালাসি বলা হয়। যা আপনি করেছেন।
আপনি বলেছেন, “আমরা পুরুষরা মায়েদের এবং স্ত্রীদের এই অক্লান্ত কাজকে কাজ মনে করি না, অফিস কিংবা ঘরের বাহিরের কাজকেই কাজ মনে করি ইত্যাদি।” আশ্চর্য! এমন কথা তো আমি বলিনি। আমার মা তো ১০ সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন। তাদেরকে লালন-পালন করেছেন। তিনি চাকরি করেন নাই। কিন্তু, কিছু সাইড-বিজনেস করেছেন। প্রচুল সোশ্যাল ওয়ার্ক করেছেন। আমি তো উনাকে সফল নারী মনে করি।
আপনি লিখেছেন, “একটা শিক্ষিত মেয়ে যখন পড়াশোনা শেষে চাকরি না করে পুরো সময় সংসারে দিতে চায় তখন তারই বন্ধু-বান্ধবী, আপনজনসহ অনেকেই নাক সিটকায়।” আমি তো মনে করি, “একজনকে বিএ-এমএ পাশ করাতে কী পরিমাণ টাকা রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয়, তা জানার চেষ্টা করলে আমরা বুঝতে পারবো, শিক্ষিত নারীদের চাকরি না করা রীতিমতো দণ্ডনীয় অপরাধ।” কেন আমি এমনটা মনে করি তার কারণও আমি সেখানে ব্যাখ্যা করেছি। মনে হয়, আপনি লেখাটা ভালো করে পড়েননি। আমার লেখাটা ভালো করে পড়লে আপনি দেখতে পেতেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অর্জিত শিক্ষার দাবি পূরণ না করার এই ‘ননাইয়া আবদার’কে আমি একটি জাতীয় সমস্যা হিসাবে দেখছি। এটি একাধারে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক সমস্যা।
বাচ্চার মা হওয়া, তাদের লালন-পালন করা ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার জন্য এই গরীব দেশে একজন নারীর বিএ/এমএ পাশ করার কোনোই দরকার নাই। আমার এই ছাঁচাছোলা ও চরম অস্বস্তিকর মন্তব্যগুলো দুই ধরনের লোককে খুব জ্বলুনি দেয়ার কথা। নিছক বিয়ের জন্য যারা পড়ে, এমন মেয়েদেরকে। এবং ‘বউ উচ্চশিক্ষিত’ নিছক এটি বলা ও ভাবার জন্য যেসব পুরুষ উচ্চশিক্ষিত নারীদের বিয়ে করে, তাদেরকে।
আমার পোস্টে আমি তো এমনও বলেছি, “সব মেয়েদের চাকরি করতেই হবে, এমন কথা নাই। চাকরি করুক বা না করুক, … সব নারীরই উচিত নিজ সংসার ও ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে দেশ ও দুনিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা। … বৃহত্তর অঙ্গনে সামাজিক ও সামষ্টিক দায়িত্বসমূহকে মূলত ছেলেদের কাজ, এমন মনে না করে সাধ্য মতো সোশ্যাল ওয়ার্ক করা কর্মজীবী ও অ-কর্মজীবী নির্বিশেষে প্রত্যেক নারীর একান্ত দায়িত্ব। … আপনার উচিত, আপনার মতো করে সিরিয়াসলি কিছু না কিছু করে যাওয়া। …
হ্যাঁ, হতে পারে, আপনি মা হতে চলেছেন। তাই চাকরি করছেন না। হতে পারে আপনি পর পর অনেকগুলো সন্তানের মা হয়েছেন। তাদেরকে সামলাতে হচ্ছে। আমরা তো জানি, কষ্টের দিক থেকে বলেন, গুরুত্বের দিক থেকে বলেন কিংবা মর্যাদার দিক থেকে বলেন, মাতৃত্বের চাকরির চেয়ে তো বড় কোনো চাকরি নাই।”
যেসব অকর্মন্য নারীদের কটাক্ষ করে আমি কথা বলেছি, তাদের পরিচয় ও অবস্থা সম্পর্কে আমি বলেছি, “কিন্তু, দেখা যায়, দুয়েকটা বাচ্চা নিয়ে কোনো কোনো শিক্ষিত মহিলা জীবন পার দিচ্ছেন। সংসার করা ছাড়া আর বিশেষ কিছু না করেই। এটি কখনোই একজন মুসলিম নারীর জীবন হতে পারে না। ইকামতে দ্বীন বা সামাজিক-আদর্শিক দায়িত্ব তো নারী-পুরুষ সকলের দায়িত্ব।”
কিন্তু আপনার কথা থেকে মনে হচ্ছে, আমি নারীদের আয়-উপার্জন করার কথা বলছি নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে। অথচ, আমার পুরো পোস্টে আমি পশ্চিমা এনজিওবাদী ধ্যান-ধারণার তুমুল সমালোচনা করেছি। পুরুষতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্রের পার্থক্য তুলে ধরেছি। কর্মজীবী নারীদের সংসারকে সুন্দর ও সুখী করার উপায় বাতলে দিয়েছি। আমি স্পষ্ট করে বলেছি, নারীদের ইসলাম প্রদত্ত অর্থনৈতিক সাপোর্টগুলোকে তামাশায় পরিণত করার এই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, নিজেদের মানবিক মর্যাদা রক্ষার জন্য তাদের উচিত আয়-উপার্জনের কোনো ব্যবস্থার সাথে লেগে থাকা।
আমি শুধু তত্ত্ববিদ-লেখক নই, বরং আমি একজন সক্রিয় সমাজকর্মী। নারীদের মধ্যে ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলে আমার অনেক কাজ আছে। সেটা আপনার জানা নাও থাকতে পারে। আমি দেখেছি, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে মেয়েরা কীভাবে প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে নানা ধরনের ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছে। ইসলামপন্থী পুরুষদের এ সংক্রান্ত রেকর্ড কিন্তু কিছুমাত্র ভালো নয়। ব্যতিক্রম বাদে।
‘কোনো নারী চাকরি বা ব্যবসা করবে কিনা সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত’– এমনটা মনে করা হলো পাশ্চাত্য উগ্র-নারীবাদকে সমর্থন করা। এর বিপরীতে, ‘তারা শুধু সংসারই করবে। তাদের নিজস্ব সম্পদ থাকতে পারবে না। তারা আয়-উপার্জন করতে পারবে না’– এমনটা মনে করা হলো নিবর্তনমূলক প্রাচ্য-পুরুষতন্ত্রকে সমর্থন করা। বুঝতেই পারছেন, আমি এই দুই প্রান্তিকতারই ঘোরতর বিরোধী। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য দীর্ঘ এই লেখায় আমি যথাসম্ভব ক্লিয়ার করেছি।
বাধ্যগত পরিস্থিতি হতে মুক্ত ও সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, এমন একটা আবহে নিজের পেশাগত জীবন নিয়ে স্বামীর সাথে নেগোশিয়েট করার স্কোপ সংশ্লিষ্ট নারীকে দিতে হবে। তাই, নারীদেরকে ‘সংসার অথবা চাকরি’– এ ধরনের বিকল্পের মুখোমুখি করা হচ্ছে এক ধরনের ফলস বাইনারি।
কারো কারো এ ধারণা হতে পারে, কর্মজীবী নারীরা সংসারী হয় না। এটি ভুল। নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে আমার ধারণা হলো, চাপিয়ে দেয়া স্বাধীনতা হলো উচ্ছৃংখলতা অথবা পরাধীনতার নামান্তর। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। সেজন্য নারীসমাজসহ অনাবশ্যক কর্তৃত্বের নিগড়ে পিষ্ট হয়ে পিছিয়ে পড়া প্রত্যেক শ্রেণীকে দিতে হবে মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতা অর্জন করার সহায়ক পরিবেশ ও পর্যাপ্ত সুযোগ।
কর্তৃত্ব নিয়ে আমার এই মন্তব্যটা নিয়েও হতে পারে ভুল বোঝাবুঝি। সেজন্য দ্বিরুক্তি করে বলছি, অনাবশ্যক ও অন্যায় কর্তৃত্ব-প্রথা তথা পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করার পাশাপাশি আমি ন্যায়সংগত কর্তৃত্ব বজায় থাকা বা রাখা তথা পিতৃতন্ত্রের পক্ষে আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। ক্ষেত্রবিশেষে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব হতে পারে পুরুষের। আবার, ক্ষেত্রবিশেষে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব হতে পারে পরিবারের কোনো নারী সদস্যের। এর পাশাপাশি আমাদের এই কথাও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, পারিবারিক বিষয়ে সবকিছু কর্তৃত্ব-আনুগত্যের ব্যাপার, এমনও নয়। কিছু কিছু বিষয় বরং পারস্পরিক সম্মতি ও সমঝোতার ব্যাপার।
Shayer Shofiqur Rahman: প্রথমত আমার উদ্দেশ্য ছিল একটি গ্রুপের একটি পোস্টে কমেন্ট করা। ঘটনাক্রমে সে পোস্টের কমেন্ট বক্সে আপনার এ পোস্টের লিংক দেয়া ছিল। আপনার নাম দেখে পোস্টট পড়তে আগ্রহী হই। মূলত এই কমেন্ট সে গ্রুপের সে পোস্টটিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কমেন্ট করার পর দেখি মূলত আপনার পোস্টে কমেন্টটি হয়েছে। তথাপি আমি কমেন্টটি না কেটে একই কমেন্ট ঐ গ্রুপেও করি। এখন প্রসঙ্গ আসতে পারে আমি কেনো আপনার পোস্টে ভুলক্রমে করা কমেন্টটি মুছে দেইনি। কারণ, পুরো পোস্টের সাথে আমার কমেন্টটি পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক না হলেও ক্ষেত্রবিশেষে আপনার পোস্টের কিছু পয়েন্টে এবং অন্য আরো কয়েকজনের কমেন্টের প্রেক্ষিতে কিছু হলেও প্রাসঙ্গিকতা আমার কমেন্টের আছে। তাই কমেন্টটি কাটা হয়নি। আমার এই কমেন্টটি মূলত আমারই একটি ফেসবুক পোস্ট, যা আমি বছর দুয়েক আগে বোনদের উদ্দেশ্য করে লিখেছিলাম। যা হোক আপনার পোস্ট নিয়ে আমার কিছু জানার আছে স্যার যা আমি লিখছি।
Shayer Shofiqur Rahman: আমি আপনার পোস্টটি পুনরায় পড়েছি এবং কমেন্ট দুটিও পড়েছি। আমার মনে হচ্ছে আমার যা জানার ছিল তা জানতে পেরেছি। ধন্যবাদ স্যার।
আমার বান্ধুবির বয়ফ্রেইন্ড তাকে একদিন বলে বিয়ের আগে যা করো করতে পারো। বিয়ের পর আমার কথা মতো চলতে হবে কিছু বলতে পারবা না। আমার পরিবার চায় না তাদের ঘরের বউ চাকরি করুক। কিন্তু আমার বান্ধুবির ইচ্ছা সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে ওর স্বপ্ন এটা। কিন্তু ওরা ২ জন ২ জন কে ভালোবাসে। অনেক বছরের সম্পর্ক। কি করবে বুজতে পারছে না। এই ব্যাপারে একটু সাহায্য চাই
নারী-পুরুষ আসলে বিয়ের মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা পেতে চায়। বিয়ের আগে ভালোবাসা মূলত এক ধরনের পছন্দ ছাড়া আর কিছু নয়।
দীর্ঘজীবনে দেখেছি, কোনোক্রমে বিয়ে করবে না এমন পুরুষকেও একজন নারী বিয়ের পর, বিশেষ করে সন্তান হওয়ার পর খুব সহজভাবে মেনে নেয়। এবং তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে সাধারণত; স্বামী যদি অত্যন্ত দুর্ব্যবহারকারী কিংবা ‘অক্ষম’ না হয়ে থাকে।
সেজন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে তোমার বান্ধবীর উচিত নিজের ক্যারিয়ারকে প্রায়োরিটি দেওয়া। যে পুরুষ বিয়ের আগে এরকম কথা বলতে পারে, তার সাথে সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মানেই হচ্ছে স্বেচ্ছায় গোলামীর জিঞ্জিরকে নিজের কাঁধে পরে নেওয়া। এর বেশি আর কিছু আমার বলার নেই। তাকে জানিয়ে দিও।
আর যদি ভালো মনে করে, তাহলে আমার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে।
সাথে আমার এই ভিডিও বক্তব্যটি দেখতে পারো:
আশা করি ভাল আছেন। আমি লেখাপড়া করেছি এবং এখন করছি বিবিএ তে ভর্তি হব। আমি অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলাম, প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। এখন আমি চাকরি করতে চাচ্ছি, আমার বিয়ের পরে আমার লেখাপড়ার খরচ আমার বাবা-মা ই চালাচ্ছে, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে চাকরি করতে দিচ্ছে না সে বলে যদি চাকরি করতে হয় তাহলে তোমার বাপের বাড়ি যেয়ে চাকরি করো আমার এখানে চাকরি করতে পারবে না তাহলে আমার কি করা উচিত। আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
স্যার,আমি একজন নারী। আমি তিন সন্তানের জননী। স্যার,আমি নানা কষ্ট এবং ত্যাগের বিনিময় ‘বাউবি’থেকে ইন্টার পাশ করেছি।এখন করোনা পরিস্থিতির কারনে ডিগ্রী পরীক্ষা দিতে পারিনি।বর্তমান আমার সার্টিফিকেটে আমার বয়স ত্রিশের একটু বেশি।আমার ছোট বয়সে বিয়ে হয়েছিল।আমার দেবর আমার ভোটার আইডি কার্ডে দুই বছর বয়স বাড়িয়ে দিয়ছে।আমি যখন বললাম আমার বয়স কেন বাড়িয়ে দিলেন তখন তিনি আমাকে তুচ্ছ করে বললেন আপনি কি বিয়ে বসবেন?আপনার বয়স বাড়ানে কি হয়েছে?বয়স কম থাকায় আমি জোড়ালো প্রতিবাদ করিনি। আমি জয়েন্ট ফ্যামিলিতে ছিলাম।এখন আমার স্বামী আমার ব্যক্তিগত খরচ দেয় না।ফলেআমি বরই কষ্টের মাঝে দিন কাটাই।এর মধ্যে আমি এক বছরের মেয়াদে আমি কম্পিউটারে কোর্স করেছিলাম।আমার সন্তান ছোট থাকায় আমি কোথাও চাকুরির জন্য আবেদন করতে পারিনি।ঘরে কম্পিউটার না থাকায় ধীরে ধীরে ভুলে যাই। তবে মনে হয় কিছুদিন অনুশীলন করলে আবার পারবো। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি।এবং যেখানে যাই বোরকা পরে বাহিরে যাই।আমি সৎ উপায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি অনেক পরিশ্রমী নারী।আমি দুমাস আগে মোটরসাইকেল চালানো শিখেছি। আমি পুরোপুরি চালাতে পারি।এখন আমি টাকার জন্য মোটরসাইকেল কিনতে পারিনি।আমি পুরুষদের মতো বিদেশে গিয়ে কাজ করতে রাজি আছি।মোট কথা আমি সৎ উপায়ে উপার্জন করতে চাই।স্যার,আমি আশা করি আমাকে সঠিক পরামর্শ দিবেন