ডিসকাসশান পয়েন্টস:
১. ইচ্ছার স্বাধীনতা, নৈতিকতা ও অদৃষ্টবাদের মধ্যে কন্ট্রাডিকশন।
২. জাবারিয়া, কাদারিয়া, মুতাজিলা ও আশারিয়াদের পজিশন।
৩. তাকদীর সংক্রান্ত আলোচনা একটি কম্প্রিহেনসিভ ব্যাপার।
৪. তাকদীর সংক্রান্ত আলোচনার প্রচলিত পদ্ধতির ত্রুটি: আল্লাহ আছেন ধরে নিয়ে বিষয়টাকে এনগেইজ হওয়া।
৫. তকদির সংক্রান্ত আলোচনার সঠিক পদ্ধতি: ব্যক্তির (১) আত্মসত্তার উপস্থিতি – হতে – (২) জগতের বাস্তবতা – হতে – (৩) খোদার অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুমান করা।
৬. গড বলতে কী বোঝায়? ‘প্রকৃতি’র প্রকৃতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃতি-অতিবর্তী ‘একটা কিছু’র ধারণায় উপনীত হওয়া।
৭. ফিলোসফিক্যাল গড-এর ধারণা হতে পার্সোনাল গড-এর ধারনায় উত্তরণ। নবুয়তের যৌক্তিকতা।
৮. সর্বশক্তিমান কোনো সত্তা যদি থেকে থাকেন তাঁর দিক থেকে কোনো কিছু স্বাধীন হতে পারে না।
৯. জগত তথা পার্টিকুলার সত্তার পক্ষ থেকে খোদা (particular to absolute), খোদা তথা অ্যাবসোলিউট এনটিটির পক্ষ থেকে জগৎ (absolute to particular), ও খোদার স্বয়ং সত্তা (ABSOLUTE to HIMSELF), এই তিন দৃষ্টিকোণের পার্থক্য।
১০. খোদার জাত ও সিফাতের পার্থক্য।
১১. খোদার মধ্যে মানবিক বৈশিষ্ট্য থাকার কারণ (anthropomorphism)
১২. সার্বিক যদি সার্বিক রুপে বিশেষের কাছে এপিয়ারড হয় তাহলে অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিশেষ সত্তা, সার্বিক সত্তাকে ধারণ করতে অক্ষম হবে এবং সর্বাবস্থাতেই বিশেষ সত্তা, সার্বিককে কোনো-না-কোনোভাবে বিশেষীকরণ করেই দেখবে ও জানতে পারবে।
১৩. extraordinary rational capacity of human beings. they predicate the world, even God.
১৪. ঐশী অজ্ঞেয়বাদ (DIVINE agnosticism)
১৫. বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নির্ধারণবাদ বা ডিটারমিনিজম। কেয়স থিওরি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এন্ড ম্যাথামেটিক্স।
১৬. দুইটা বা একাধিক বৃহত্তম বৃত্ত, সর্বশেষ বিন্দুর পরে আরো কোনো বিন্দু, ইনফিনিটির চেয়ে বড় বা ছোট কোনো অসীম সত্তা, এবসলিট-অতিবর্তী কোনো পার্টিকুলার অস্তিত্বশীল হওয়া বা থাকা, এগুলো যেমন করে হতে পারে না তেমনি করে খোদা যদি থেকে থাকেন তাহলে তিনি এক, একক ও অদ্বিতীয় না হয়ে পারেন না।
১৭. জাগতিক দিক থেকে মন্দকে মন্দ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ স্বীয় মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে সবকিছু দেখবে, বলবে ও ভাববে, এটাই স্বাভাবিক।
১৮. মানুষের অনুসন্ধিৎসা অনস্বীকার্য ও অন্তর্গত। নবী-রাসূলগণও এই মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত ছিলেন না। ইব্রাহিম (আ) ও উযাইর (আ) এর ঘটনা।
১৯. মানবিক যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান ও বিবেচনাবোধের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বনাম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
২০. মানুষ মাত্রই অন্তর্গতভাবে স্বীয় অস্তিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট। অসন্তোষ হচ্ছে অধিকতর ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কোনকিছু না পাওয়ার কারণে। ছিন্নমূল, হতাশ ও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিবর্গের মানসিক পূর্বধারণা: সুখ আমার প্রাপ্য। অস্তিত্ব এবং সুখ চাওয়া এই দুইটার মধ্যে প্রথমটা হল অস্তিত্ব, which is followed by demand for happiness.
২১. আমরা কি এই জাগতিক বাস্তবতার ব্যাখ্যা আলোচনা করার জন্য বসেছি? নাকি, কল্পনা-অযোগ্য কোনো ‘জগত'(?) সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য বসেছি? জাগতিক বৈচিত্র্যময়তা, অস্তিত্বগত ক্রমসোপান ও খাদ্য-শৃংখলের অপরিহার্যতা।
২২. Is luck distribution a must? মানুষ হওয়া থেকে শুরু করে মুসলমানের ঘরে জন্ম গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন। সবার পক্ষে কি ভালো থাকার সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব?
২৩. তাত্ত্বিক দিক থেকে মন্দ-শূন্য কোনো জগত কি আমরা কল্পনা করতে পারি?
২৪. মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আছে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে চাওয়ার সহজাত প্রবণতা। আত্মস্বার্থের এই ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে একান্ত জৈবিক ব্যক্তিস্বার্থ থেকে শুরু করে ব্যক্তির বস্তুগত, জ্ঞানগত ও নৈতিক স্বার্থ।
২৫. অপ্রতিরোধ্য শক্তির সাথে যে কোনো শর্তে সন্ধি-সমঝোতা ও প্রয়োজনে শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করাই হচ্ছে আত্মস্বার্থবোধের দাবি।
২৬. ‘অপ্রতিরোধ্য শক্তি’র সঠিক সংজ্ঞায়ন। ব্যক্তিগতভাবে অপ্রতিরোধ্য, সামাজিকভাবে অপ্রতিরোধ্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে অপ্রতিরোধ্য, আন্তর্জাতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য, বস্তুগতভাবে অপ্রতিরোধ্য, এই ধরনের সাময়িক অপ্রতিরোধ্যের সাথে ‘সার্বিক অপ্রতিরোধ্য’ বা absolute authority এর পার্থক্য নিরূপণ।
২৭. তাহলে, স্বাধীনতা কী?
অথরিটি এন্ড লিবার্টি-এর সূত্র অনুসারে, স্বাধীনতা হলো সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাবনার মধ্যে একটা সমন্বয়। Freedom is a combination of authority and potentiality. কোনো পার্টিকুলার বিইং-এর মেটাফিজিক্যাল সেন্সে পূর্ণস্বাধীনতা বা absolute freedom থাকার ধারনা বা দাবি হলো একটি অলীক ও অবাস্তব ধারণা। আবার, ‘ইচ্ছার স্বাধীনতা নাই’ – এই কথাটা স্বয়ং স্ববিরোধী বা সেল্ফ-রিফিটিং। বরং, ‘আমি স্বাধীন’ এই কথাটা হলো সেলফ-এভিডেন্ট।
২৮. নো অথরিটি, নো লিবার্টি। কেউ যদি বলে, ‘কোনো অথরিটি নাই। কিন্তু লিবার্টি আছে’ তারমানে, প্রকারান্তরে সে নিজেকেই ফাইনাল অথরিটি হিসেবে মনে করে। অথচ, মেটাফিজিক্যাল সেন্সে এটি সিম্পল স্টুপিডিটি অ্যান্ড অডাসিটি। কারণ, সে নিজেকে পার্টিকুলার এনটিটি হিসেবে আগেই স্বীকার করে নিয়েছে। কোন পার্টিকুলার এন্টিটি, আল্টিমেট অথরিটি হতে পারে না। এটি অনস্বীকার্য বা সর্বস্বীকৃত তত্ত্বগত সত্য (undeniable or agreed ontological fact)।
২৯. সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের বস্তুগত চাওয়ার অনিবার্যতা, অবস্তুগত চাওয়ার অন্তহীনতা ও অস্তিত্বগত সুরক্ষার জন্য আমাদেরকে প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সমঝোতা করে চলতে হয়। খোদার অস্তিত্বে অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিতে প্রকৃতি হচ্ছে ঈশ্বরতুল্য, ফিলোসফিক্যাল গড বলতে যা বোঝানো হয়।
৩০. প্রাকৃতিক আইন নামক এক অস্পষ্ট ধারণার মাধ্যমে কিংবা প্রাকৃতিক আইনের স্রষ্টা ও নিয়ন্তা হিসেবে সরাসরি ঈশ্বরের ধারণার মাধ্যমে, যেভাবেই হোক না কেন দিনশেষে আমরা সর্বশক্তিমান এক পরমসত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হই। আল্টিমেট হিসেবে আমরা নেচারকে মানবো, নাকি গডকে মানবো সেটি যার যার নিজস্ব ব্যাপার।
৩১. উল্লেখ্য, আদৌ গড আছে কিনা সেটি আমাদের বর্তমান আলোচনার বিষয় নয়। বরং এটি আমাদের যেসব অস্তিত্বগত মৌলিক প্রশ্ন আছে সেগুলোর সাথে রিলেটেড। অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কিনা সেটি অধিবিদ্যা বা মেটাফিজিকস-এর আলোচ্য বিষয়। আমাদের বর্তমান আলোচ্য বিষয়টি একটি নৈতিকতা সম্পর্কিত বিষয়।
৩২. নৈতিক দিক থেকে একটা সমতল বিশ্বকে আমরা কল্পনা করতে পারি না। এই প্রপজিশনটি উপরে উল্লেখিত ২১নং পয়েন্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। There cannot be any actual or possible world, without luck distribution. Luck distribution is a natural phenomena. তাহলে লাক ডিস্ট্রিবিউশন কেন – এই প্রশ্নটা কি আমরা তুলতে পারি? কিংবা ‘এই ডিস্ট্রিবিউশন এভাবে কেন হল? অন্যভাবে কেন হল না?’ এই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা আমাদের নৈতিক মানদন্ড সঠিক কিনা? বিশেষ করে, বিশেষ-সার্বিকের সম্পর্কগত সূত্র অনুসারে?
৩৩. Darwinian natural selection, and Winning cosmic lottery of Richard Dawkins
৩৪. লাক ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য আমরা নেচারকে দায়ী করতে পারি কিনা, এই প্রসঙ্গে theological naturalistদের দৃষ্টিতে, হ্যাঁ, আমরা এটি পারি। sciencist naturalistদের দৃষ্টিতে আমরা লাক ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য নেচারকে দায়ী করতে পারি না। বিষয়টি পার্সোনাল এজেন্সির ধারণার সাথে রিলেটেড।
৩৫. জীবনের ধারাবাহিকতা ধারণার অনিবার্যতা। নিরীশ্বরবাদীদের মানবতাবাদ থেকে আমরা এটা সহজেই বুঝতে পারি।
৩৬. ব্যক্তি মানুষের দিক থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ কি উন্মুক্ত? নাকি, পূর্বনির্ধারিত?
৩৭. জাগতিক দিক থেকে ব্যক্তি মানুষের কি ক্রিয়েটিভিটি আছে? ইচ্ছার স্বাধীনতা ও নৈতিক দায়-দায়িত্ব আছে? স্ববিরোধ এড়িয়ে এই প্রশ্নের কি নেতিবাচক উত্তর দেয়া সম্ভব?
৩৮. potentiality-actuality relation. যেহেতু সৃজনশীল কাজে ব্যবহৃত সবগুলো উপাদান পূর্ব থেকেই ছিল এবং সূজনশীলতার ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই পটেনশিয়াল ফর্মে ছিল, তাহলে কোন দৃষ্টিতে আমরা কোনো একটি কাজকে ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল মনে করছি?
৩৯. যেকোনো নৈতিক বা সৃজনশীল কাজে ব্যক্তিমানুষ হচ্ছে দ্বিতীয় লেখক বা সেকেন্ডারি অথর। এক্ষেত্রে নেইচার অথবা গডই হচ্ছেন ফার্স্ট অথর। অথবা, বলতে পারেন সামথিং লাইক দ্যা প্রিন্সিপাল কন্ট্রিবিউটর।
৪০. অতএব, প্রকৃতি কিংবা প্রকৃতির নিয়ন্তা হিসেবে ঈশ্বরের দিক থেকে যদিও সবকিছু স্বভাবতই সুনির্ধারিত বা পূর্বনির্ধারিত, তথাপি আমাদের দিক থেকে আমাদের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা থাকাটা সম্ভবপর, বাস্তব ও অনিবার্য।
৪১. আমাদের জ্ঞান আমাদের অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধ দ্বারা সীমায়িত। বস্তুগত জ্ঞান থেকে শুরু করে নৈতিক গেয়ান, এককথায় সকল প্রকারের মানবিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।
৪২. আমাদের অস্তিত্ব যেহেতু পার্টিকুলার এবং যেহেতু পার্টিকুলার কখনো অ্যাবসলিউটকে ধারণ করতে পারে না, এবং এবসোলিউটের ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল নিরূপণ করতে পারে না বা পারার কথা না, সে হিসেবে আমরা প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বরকেও আমাদের বিচার-বিবেচনার অধীন করতে পারিনা।
এক্ষেত্রে আমাদের কী করতে হবে তা ২৫ এবং ২৯নং পয়েন্টে বলা হয়েছে।
৪৪. ব্যক্তিবিশেষ হয়েও যদি আমরা জগতের অতিবর্তী কোনো সার্বিক সত্তাকে আমাদের অতীব সীমাবদ্ধ ও খন্ডিত অভিজ্ঞতা এবং তদনুরূপ সীমিত জ্ঞান দিয়ে যাচাই করতে চাই তাহলে তা বিশেষ-সার্বিকের সূত্র, যেটাকে আমরা নিজেরাই সঠিক মনে করি, সেটাকে ভঙ্গ করা হয়। বিশেষ এর সাথে সার্বিক এর সম্পর্ক হবে একমুখী। বিশেষ সবসময় সার্বিক এর অনুগামী হবে। জগতে তেমন কোনো সার্বিক সত্তা আছে কিনা সেটা আমরা আমাদের বিশেষ (particular অর্থে) হওয়ার বিষয় থেকে বুঝতে পারি। কোন সার্বিক এর অনুপস্থিতিতে কোন কিছু বিশেষ হতে পারে না। কথাটা উল্টো করে বললে, বিশেষ থাকলে সার্বিকও থাকবে। তবে কোন এনটিটিকে আমরা সার্বিক হিসেবে চিহ্নিত করছি বা মেনে নিচ্ছি, কিংবা সেটার সাথে আমরা কী ধরনের সম্পর্ক করতে চাচ্ছি, সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
৪৫. জগতের অভ্যন্তরে ঘটেছে, ঘটছে বা ঘটতে পারে এমন সব কিছুই হলিস্টিক বা ডিডাকটিভ পয়েন্ট অব ভিউ থেকে কনক্লুসিভ হতে বাধ্য। কারণ এ জগত পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। এই নিয়মসমষ্টির সৃষ্টিকর্তা বা নিয়ন্তা হিসেবে একজন ঈশ্বরে আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন, তাতে কিছু আসে যায় না।
৪৬. দার্শনিক পরিভাষায় নিয়ন্ত্রণবাদ ও ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মাঝে মাঝে এই অবস্থানকে বলা হয় সমন্বয়বাদ বা compatibilism। বিজ্ঞানপন্থী বস্তুবাদীদের অবস্থান নিয়ন্ত্রণবাদের পক্ষে কিম্বা সমন্বয়বাদের পক্ষে। তাদের কেউ অনিয়ন্ত্রণবাদ বা ইচ্ছা স্বাধীনতার পক্ষে নাই। যতটুকু আমি দেখেছি বা জেনেছি। সমন্বয়বাদ হচ্ছে সেই অবস্থান যেটাকে আমি ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ‘জগতের দিক থেকে খোদা’ বা from world to God হিসাবে দেখিয়েছি।
৪৭. প্রাকৃতিক অমঙ্গলকে মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। কিন্তু, মানুষ চাইলে যে মন্দ কাজটি না করে থাকতে পারে অথচ সে সেই মন্দ কাজটি করেছে, এমতাবস্থায় আমরা এই মন্দ কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অন্যায়কারী হিসেবে চিহ্নিত করব বা করি। অর্থাৎ প্রাকৃতিক অমঙ্গল, নৈতিক অমঙ্গল এবং সার্বিক অমঙ্গল, এই তিনটা ভিন্ন ভিন্ন ফেনোমেনা। পার্টিকুলার হিউম্যান বিইং হিসেবে আমরা এর মধ্যে শুধুমাত্র নৈতিক অমঙ্গলের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারি।
৪৮. আমাদের ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক বা ক্ষুদ্রতর দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে অমঙ্গল মনে হলেও তথাকথিত প্রাকৃতিক অমঙ্গল কিংবা কথিত সার্বিক অমঙ্গলসমূহ আসলেই অমঙ্গল বা এভিল কিনা সেটা আমরা কখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। যেহেতু প্রকৃতির কোনো সচেতনতা নাই, তাই অমঙ্গলের জন্য আমরা প্রকৃতিকে দায়ী করতে পারিনা। আবার সব তথ্য ও সার্বিক জ্ঞান আমরা গ্রহণ ধরন ও প্রসেস করতে না পারার কারণে ওভারঅল বা সার্বিকভাবে কোন কিছু আদৌ খারাপ বা অমঙ্গল হচ্ছে কিনা সেটাও আমরা সঠিকভাবে স্বভাবতই জানতে পারি না।
৪৯. ঈশ্বরের দিক থেকে দেখলে আমরা বুঝতে পারি, ঈশ্বর তথা সার্বিক সত্তা, জগৎ তথা ব্যক্তি সত্তার উপর নির্ভরশীল নন। কোনো পূর্বনির্ধারিত নিয়মের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার কারণে খোদা বা ঈশ্বরের পক্ষে কোন বেআইনি কাজ করা অসম্ভব। অর্থাৎ প্রকৃতি বা ঈশ্বরের সকল কর্মই নীতি-নিরপেক্ষ অর্থে সদা নৈতিক। এই অর্থে বলা হয়, ঈশ্বর হলেন সর্ব মঙ্গল ময়।
৫০. উপরে উল্লেখিত ২০ নম্বর পয়েন্ট অনুসারে আমরা বলতে পারি, ঈশ্বর হচ্ছেন পরম দয়ালু। কেননা, তিনি যদি জগৎ সৃষ্টি না করতেন এবং এই জগৎকে এভাবে সৃষ্টি না করতেন তাহলে আমি আপনি এখানে অস্তিত্বশীল হতে পারতাম না। আমরা এই আলোচনাটিও করতে পারতাম না। জগতে যদি আমরা না আসতাম, আমাদের উপযোগী জগত যদি না হতো তাতে করে অন্য কারো তেমন কোনো লাভক্ষতি হতো না। এমনকি এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা বঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, এ’টুকু ভাবার সুযোগও আমরা পেতাম না। জগতের সেরা নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স কসমিক লটারি জেতার আনন্দে বিভোর হতেও পারতেন না।
৫১. মূলকথা হলো, আমরা আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে জন্মগত এবং সহজাতভাবেই সুখী ও সন্তুষ্ট। এবং খুব সম্ভবত এ ধরনের জগৎ সৃষ্টির উপযোগী anthropic principle সেট করার জন্য আমাদের উচিত ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতির প্রতি অনুগত ও কৃতজ্ঞ থাকা।
৫২. কেবলমাত্র অতীত ও বর্তমানের নিরিখে যে ভবিষ্যৎ, সেটি উন্মুক্ত। কালোত্তীর্ণ সত্তার নিরিখে কোনো কিছু ভবিষ্যতের হতে পারে না। তারমানে, সময়ের অতিবর্তী কোনো সত্তার কাছে কোনোকিছু ওপেন পসিবিলিটি হিসেবে থাকতে পারে না। ‘মানুষ মরণশীল’ হতে শুরু করে পদার্থবিদ্যা বিজ্ঞানের মৌলিক নিয়মাবলী, যেগুলোকে আমরা মৌলিক বা চিরন্তন সত্য বাণী হিসেবে মেনে নিয়েছি, সেগুলো কি আমরা কালোত্তীর্ণ হিসেবে ধারণা করছি। অন্যকথায়, কালোত্তীর্ণ নয় এমন কোনোকিছু চিরন্তন সত্য হতে পারে না।
তদুপরি ভবিষ্যতের দৃষ্টিতে কাল হলো মাত্র দুটি: অপরিবর্তনীয় বর্তমান ও অতীতকাল। তারমানে ভবিষ্যতের দিক থেকে বর্তমান হল অতীতের মতো বদ্ধ, ফিক্সড বা ইতিমধ্যেই নির্ধারিত।
৫৩. খোদা যদি থেকে থাকেন তাহলে তাঁর দিক থেকে আমাদের যাবতীয় জাগতিক বাস্তবতা অলরেডি ফিক্সড না হয়ে পারে না। তাকদীর তথা অদৃষ্টবাদকে দেখতে হবে ‘খোদার দিক থেকে জগৎ’ – এই পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে।
৫৪. খোদার অস্তিত্ব সংক্রান্ত আলোচনা থেকে তাকদীরকে যদি মাইনাস করা হয় তাহলে পুরো বিষয়টি স্ববিরোধপূর্ণ ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই দৃষ্টিতে তাকদীর হলো তাওহীদ বিশ্বাসের অন্যতম মৌলিক বিষয়।
৫৫. বিজ্ঞানবাদীগণ কর্তৃক কল্পিত খোদা ও তাকদিরবিহীন পৃথিবীও কিন্তু সুনির্দিষ্ট নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতা এবং অব্যাখ্যাত নিয়মের কঠোর শৃংখলের বাইরে গিয়ে কোনো ব্যক্তিসত্তার পক্ষে কিছুমাত্র স্বাধীন হওয়াটাও একেবারে অসম্ভব। কোনো কার্যকর নিয়মের অধিকতর সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমরা নাও জানতে পারি, কিংবা কার্যকর নিয়মটিই হতে পারে এখনও জানা সম্ভব হয়নি, কিংবা, এমনও হতে পারে, কোনো নিয়ম যে কার্যকর আছে সেটিই আমরা হয়তো বুঝতে পারছি না। এসবই হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক একটা জগতে নিয়মের বাইরে কোনো কিছু হওয়াটা অসম্ভব।
৫৬. এই পয়েন্টে এসে ধর্মপন্থীদের সাথে বিজ্ঞানপন্থীদের অবস্থান অভিন্ন হয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ মনে করে, নিয়ম ও সম্ভাবনা যা হওয়ার তা অলরেডি অটোমেটিক্যালি বা গড কর্তৃক ফিক্সড হয়ে গেছে। বরং যেই পটেনশিয়ালিটি এবং রুলস-রেগুলেশন দিয়ে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে বা অস্তিত্বশীল আছে, সেগুলোর ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিপরীত বা সংঘর্ষিক কোনো নতুন সম্ভাবনা বা নিয়মাবলী হতে পারে না। অর্থাৎ new form of actualization is possible. but new set of laws and new form of potentiality is impossible.
৫৭. তাহলে শেষ পর্যন্ত কি ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকলো? মন্দহীন বা evil free বা all good কোনো পৃথিবী কি গড়া সম্ভব?
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আপনার বিবেক বুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এই প্রশ্নগুলোর একটা সুসামঞ্জস্য সমাধান আপনি সহজেই খুঁজে নিতে পারেন।
মোজাম্মেল হক স্যারের সব গুলো আলোচনা শোনার চেষ্টা করি। আমার জানার বুঝার চেষ্টা গুলোর কিছুটা অভিপ্রায় উনার থেকে পাই।