পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইসলাম।”
এমতাবস্থায় ইসলাম ছাড়া অপরাপর দ্বীনসমূহের সাথে ইসলাম অনুসারীরা কেমন আচরণ করবেন, তা নির্ধারণ করার আগে আমাদের বুঝতে হবে, দ্বীন বলতে এখানে কি নিছক ধর্ম বুঝানো হচ্ছে? নাকি, অন্যকিছু।
আল্লাহ তায়ালা সুরা সফ-এর ৯নং আয়াতে বলেছেন, “তিনি তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে, অপর সকল দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করার জন্য। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।”
অপরাপর দ্বীন মানে যদি হয় অন্যান্য ধর্মসমূহ, তাহলে সমকালীন নানা মত, মতবাদ, তত্ত্ব, জীবনদর্শন (life-view) ও জীবনব্যবস্থাসমূহের ব্যাপারে ইসলামের কোনো বিরোধ থাকার কথা না। অথচ, উদ্ধৃত প্রথম আয়াতটি হতে আমরা জানতে পারি, ইসলাম বলতে চায়, একমাত্র ইসলামই সঠিক। তাই, শুধু ইসলামই থাকবে। তবে, কীভাবে ইসলাম থাকতে চায় তা দ্বিতীয় উদ্ধৃত আয়াত হতে মোর ক্লিয়ারলি বুঝা যায়।
কথাটা আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, ইসলাম নিজের প্রাধান্য বজায় থাকা সাপেক্ষে অন্যদের ব্যাপারে যথাসম্ভব ইনক্লুসিভ থাকতে চায়। শুধু ইসলাম কেন, অপরাপর যে কোনো আদর্শের জন্যই এটি প্রযোজ্য। কোনো ‘আদর্শ’ আদৌ আদর্শ হতে পারে না, যদি সে নিজেকে একমাত্র ও সর্বাপেক্ষা সঠিক হিসেবে দাবী না করে। বলাবাহুল্য, মতাদর্শ মাত্রই বাস্তবে সেটি করেও থাকে। এ নিয়ে ইসলাম অনুসারীদের একতরফাভাবে হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নাই।
এক্ষেত্রে ইসলামের অনন্যতা হচ্ছে, সে নিজেকে একমাত্র সঠিক দাবী করলেও বাস্তবে সে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রতিপন্ন করার পাশাপাশি অন্যদেরকেও নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে সারভাইভ করতে দেয়। নিজের ডমিনেন্সি বজায় রাখা সাপেক্ষে অন্যদেরকে সে স্পেস দেয়।
এগুলো তো তত্ত্বের কথা।
এবার একটা বাস্তব ইস্যু নিয়ে খানিকটা বলি। কথাটা হচ্ছিলো একটা গ্রুপে। সেখানে সেক্যুলারিজম নিয়ে একজন একটা পোস্ট শেয়ার দিয়ে মন্তব্য চেয়েছেন। আমি সেখানে বলেছি:
“একজন মুসলমানের কাছে ইসলাম ছাড়া বাদবাকী সব ‘দ্বীন’ই খারাপ, অগ্রহণযোগ্য।
ব্যাপার হলো, একজন মুসলমান যখন অপরাপর দ্বীনকে জীবনের বাস্তবক্ষেত্রে মোকাবিলা করে, ডিল করে, তখন সে ঐ দ্বীনকে গ্রহণ করে একটা ‘পথের মিল’ হিসেবে। ফ্রম আ ফাংশনাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে।
এখন, অপরাপর দ্বীনগুলোকে লাইফ-ভিউ হিসেবে গ্রহণ না করে সেগুলোকে ওয়ার্কপ্ল্যান বা ফাংশনাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখার সুযোগ আছে কিনা, তা হলো প্রশ্ন। আমার দৃষ্টিতে এর জওয়াব হ্যাঁ-বাচক।
রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিতদের দৃষ্টিতে এর জওয়াব না-সূচক।
তাদের মতে, ইসলামের সাথে অন্য দ্বীনের তত্ত্ব ও বাস্তবগত কোনো মিল নাই। তারা হয়তো মনে করেন, অপরাপর দ্বীনের সাথে ইসলাম অনুসারীদের ফাংশনাল এগ্রিমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন শেষ পর্যন্ত ইসলাম অনুসারীদেরকে বাতিল দ্বীনের সাথে মতাদর্শগত অভিন্নতার দিকে নিয়ে যাবে। এ ধরনের slippery slope argument দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ভেবে নেয়— ইসলাম ছাড়া বাদবাকী সবকিছুকে যথাসাধ্য প্রতিরোধ করে যেতে হবে।
অবাস্তব এই অন্তহীন প্রতিরোধ প্রবণতার পরিণামে তারা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে চূড়ান্ত রকমের প্রতিক্রিয়াশীল।”
এরপরে সেক্যুলারিজম নিয়ে আমি বলেছি:
“সেক্যুলারিজম কোনো সিঙ্গেল এনটিটি না। এর বিভিন্ন রকমের তাৎপর্য ও চর্চা আছে। কোন ধরনের চর্চাকে বিবেচনা করা হচ্ছে তা, এবং কোন প্রেক্ষাপট হতে একে দেখা হচ্ছে তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
অপরাপর মতাদর্শের সাথে ইসলামের সম্পর্ক ও এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে আমার ‘অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ইসলামের ইতিবাচক অনন্যতা’ শিরোনামে লেখায় আমি দেখিয়েছি—
কিছু কিছু তত্ত্ব, শুধুই তত্ত্ব। যেমন, অভিজ্ঞতাবাদ, বুদ্ধিবাদ ইত্যাদি। কিছু কিছু মতবাদ মূলত প্র্যাকটিকাল কোনো আসপেক্ট নিয়ে এক ধরনের থিওরি বা এক ধরনের কার্যপদ্ধতিগত প্রেফারেন্স। যেমন, শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি হিসেবে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ইত্যাদি।
ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট টু নোট হলো, নিছক দার্শনিক মতবাদগুলোরও ফলো-আপ প্রয়োগপদ্ধতি আছে, বা সে রকম কোনো সুনির্দিষ্ট প্রয়োগ পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট থিওরিটাকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে গড়ে উঠে। আবার বাহ্যত নিছকই কার্যপদ্ধতিমূলক তত্ত্বসমূহেরও নানা ধরনের মতাদর্শগত সংশ্লিষ্টতা ও মূল্যবোধ বায়াসনেস থাকে। যেমন, মুক্ত পদ্ধতির বাজার ব্যবস্থাপনা প্রাথমিকভাবে একটি প্রায়োগিক তত্ত্ব। অথচ, এটি সর্বাংশে নৈতিক মূল্যবোধ নিরপেক্ষ কিছু নয়।
এভাবে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সব কিছুই অ-নিরপেক্ষ বা আইডিওলজিকেলি বায়াসড হয়ে থাকলে একজন মুসলিম হিসেবে সব মত, পথ, তত্ত্ব ও পদ্ধতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সে কি তার বিশ্বাসের জায়গা থেকে বাধ্য?
এখানেই হচ্ছে, বুঝার ব্যাপারটা।
কনসেপ্টের ব্যাপারে ইসলাম কোনো ধরনের শেয়ারিং ও সমঝোতায় বিশ্বাস করে না। ওয়ার্ল্ড ভিউ’র ব্যাপারে সে মোস্ট ইনটলারেন্ট। কিন্তু, বাস্তবে সে অন্যদের সাথে সবক্ষেত্রে টক্কর লাগায় না। বরং, যা কিছুকে গ্রহণ করে নেয়া বা আত্মীকরণ করে নেয়া সম্ভব তা সে করে। কোনোটাকে কিছুটা মডিফাই করে, কোনোটাকে হুবহু ইনকর্পোরেট করে নেয়।
ইসলামী শরিয়াহ’র এই ধরনের কন্টিনিউটি বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমি প্রফেসর ড. আ. ক. ম. আবদুল কাদের স্যারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছিলাম। সেটাকে এখানে আগ্রহী পাঠকদের জন্য রেফার করতে পারি। সিএসসিএসের সাইটে এটি পাবেন ‘ইসলামী শরীয়াহর ধারাবাহিকতা, মদীনা সনদ ও উম্মাহর ধারণা’ এই শিরোনামে।
যেসব বাতিল দ্বীনকে ইসলাম তত্ত্বগতভাবে কোনোভাবেই নিতে পারে না, সেগুলোর সাথে ইসলাম একধরনের ওয়ার্কিং রিলেশন গড়ে তোলে। দেখা যায়, ওই বাতিল দ্বীনের ওয়ার্ক-প্ল্যানের সাথে ইসলামের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্কিং প্রসিডিউরের কম-বেশি সাযুজ্যতা বিদ্যমান। এই কার্যগত সাযুজ্যতা বা কমন এরিয়ার ওপর ভিত্তি করে ঐ দ্বীনটা বাতিল হওয়া সত্ত্বেও এরসাথে ইসলামের (আদতে, ইসলাম অনুসারীদের) একটা চমৎকার ওয়ার্কিং রিলেশন গড়ে তোলা সম্ভবপর।
এভাবে, এমনকি এপলোজেটিক না হয়েও ইসলাম স্বীয় অনুসারীদেরকে প্রায়োগিক কার্যপদ্ধতি তথা ওয়ার্ক-প্ল্যান হিসেবে কোনো বাতিল দ্বীনকে দৃশ্যত গ্রহণ করার সুযোগ করে দেয়। যেভাবে সাম্প্রদায়িক না হয়েও ইসলাম তৎকালীন আরবের গ্রোত্র ব্যবস্থার সাথে পজিটিভ এন্ড কো-অপারেটিং রিলেশন গড়ে তুলেছিল। যেভাবে জাত্যাভিমানী না হয়েও ইসলামী খেলাফতের আওতায় বসবাসরত সবাই যার যার রাজনৈতিক, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক ও ভাষাগত জাতি পরিচয়কে অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছিল।
আমার এই আলোচনটি যদি কেউ এ পর্যন্ত বুঝতে পারেন, তাহলে সেক্যুলারিজম বা এ ধরনের কার্যব্যবস্থাপনাগত তত্ত্বগুলো নিয়ে তার স্ববিরোধিতা বা দোটানা ভাব আর থাকার কথা না।
সেক্যুলারিজম হোক আর ক-খ-গ-ঘ ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট তত্ত্বটিকে যখন একটা দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করার প্রসঙ্গ আসবে, তখন একজন মুসলিম সেটার প্রতি সর্বোতভাবেই নেতিবাচক বা repugnant হবেন। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু, এ ধরনের কিছুকে যখন একজন মুসলিম নিছক একটা প্রায়োগিক বিষয় বা কার্য ব্যবস্থাপনা হিসেবে গ্রহণ করবেন, নিজের প্যারাডাইমের মধ্যে থেকেই সেটার কোনো একটা ভার্সনের বা দিকের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করবেন, তখন ব্যাপারটা ভিন্ন রকমের হয়ে দাঁড়াবে।
এই ধরনের বাস্তববাদিতাকে অবলম্বন করে চললে মুসলমানেরা, আমার দৃষ্টিতে, অন্তহীন মোকাবিলার ভুল বাধ্যবাধকতা হতে মুক্ত হয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন।
সোজা কথায়, মিস্টিটা খাবেন। ‘বিচি’টা ফেলে দিবেন। যেভাবে আমরা এই মুহূর্তে করছি। আমরা পাশ্চাত্যের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছি, কিন্তু তাদের যেসব মূল্যবোধকে আমরা ভুল মনে করছি তা প্রত্যাখ্যান করছি।
সেক্যুলারিজম নিয়ে আমার এটাই দৃষ্টিভঙ্গী। ধর্মনিরপেক্ষতাকে যখন সামাজিক বৈচিত্র্য বজায় ও সম-নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মতবাদ হিসেবে দেখা হয়, তখন আমি সেক্যুলার। সেক্যুলারিজমকে যখন ধর্মহীনতার অর্থে ইন্টারপ্রেট করা হয় বা এ ধরনের ইন্টারপ্রিটেশন যখন কেউ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তখন আমি এন্টি-সেক্যুালার।”
উক্ত গ্রুপের আলোচনাতে প্রসঙ্গক্রমে আমি এটাও বলেছি, “একটা সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়ে আসছি বলেই আমি এভাবে সার্ভাইভ করতে পারছি। সে জন্য আমি এই সেক্যুলার সেটআপের প্রতি কৃতজ্ঞ। কথাটা খুব পরিষ্কার।”
যিনি পোস্টটি শেয়ার করেছেন তিনি এর উত্তরে বলেছেন:
“একটা ইউনিভার্সিটির সেক্যুলার সেটআপে কোনো ইসলামপন্থী ছাত্রসংগঠনও সমান সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ আখ্যা দিয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তো এদেশে প্রচুর জুলুম হয়, সারাবিশ্বেই হয়। এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো মোস্ট অব ইসলামিস্টস সেক্যুলারিজম নিয়ে অতিমাত্রায় সেনসিটিভিটিতে ভোগে।…”
এর উত্তরে অমি বলেছি:
“চবিতে শিবিরকে এলাউ করা হয় না।… চবিতে যখন শিবিরের দাপট ছিল তখন এরকম বহু সংগঠনকে টোটালি অথবা যথাসম্ভব ডিজএলাউ করা হতো। একই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসাসহ বহু জায়গাতে।
তাই, সমস্যাটা সেক্যুলারিজমের না। সমস্যাটা বিদ্যমান ভুল রাজনীতি ও দখল (অপ)সংস্কৃতির। আনফরচুনেটলি, শিবিরসহ কোনো ইসলামী সংগঠন কোনো সেক্টরেই সহাবস্থানের নজির সৃষ্টি করতে পারে নাই। অন্যান্য সংগঠন তো দূরের কথা, ইসলামী সংগঠনগুলো পরস্পরের সাথে পরস্পরও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান করতে পারে নাই। আমার ধারণায় কখনো তারা এতে সক্ষমও হবে না।”
এ পর্যায়ে তিনি আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন, “এই যে কোনো ইসলামী সংগঠন যে, কোনো সেক্টরেই সহাবস্থানের নজির সৃষ্টি করতে পারে নাই— এই সমস্যাটা কেন হয়েছে? আর ভবিষ্যতেও তাদের পারার সম্ভাবনা নেই কেন? প্রবলেমটা আসলে কোথায়?
একটা ইসলামিক সেটআপ কেন সহিষ্ণু আর উদার হতে পারছে না? এর জন্য কেনই বা সেক্যুলারিজম লাগবে? তাহলে সমস্যাটা কি খোদ ইসলামের ভেতরকার, নাকি ইসলামের আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে সমস্যা?
এরকম প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা বলবো, ইনশাআল্লাহ। …বার আসছি।”
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Khondokar Masum: “আমরা পাশ্চাত্যের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছি, কিন্তু তাদের যেসব মূল্যবোধকে আমরা ভুল মনে করছি তা প্রত্যাখ্যান করছি।” is this only ironic or hypocritical as well?
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: আমরা যখন বাজারে যাই তখন কিছু পণ্য ক্রয় করি এবং কিছু পণ্য ক্রয় করি না। এমনকি যখন কোনো বিক্রেতার কাছ থেকে কিছু কিনি, সেই একই বিক্রেতার কাছ থেকেও কিন্তু অন্য অনেক কিছু কিনি না।
সভ্যতা ও মতাদর্শসমূহ যখন পরস্পরের সাথে ইন্টারেকশন করে তখন ঠিক এই কাজটি করে। এটি মোনাফেকি নয় কোনোভাবেই। এটি যার যার আদর্শ, পছন্দ, কৌশল ও নীতি। এবং ব্যাপারটিই কোনোক্রমেই গোপন কিছু নয়।
আপনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মুহূর্তে আমার গেম থিওরির কথা মনে পড়ছে। সে বিষয়ে বিস্তারিত বলার অবকাশ এখানে নাই। শুধু এতটুকু বলে রাখি, প্রতারণা মাত্রই এক ধরনের (অপ)কৌশল। কিন্তু কৌশল মানেই প্রতারণা নয়।
Khondokar Masum: বুঝলাম, কিন্তু পণ্য বিক্রেতার সবকিছু গ্রহণ না করলেও ঘৃণা উহ্য রাখলে তা কি শরীয়তবিরোধী, can’t we be neutral at least, may be I live in West for so long, that’s why I am thinking slightly differently?
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: আমি বুঝতেছি না যে আসলে আপনি কী বলতে চাচ্ছেন। কেউ পাশ্চাত্যে বসবাস করুক বা না করুক, পাশ্চাত্য সমাজে চর্চিত মূল্যবোধসমূহের অনেকটুকু পুরোপুরি ইসলামসম্মত। তবে কিছু কিছু বিষয় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। যৌনতার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
তো, যে বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের মিলে না, সে বিষয়টা আমি গ্রহণ করি না, অথবা গ্রহণ করতে বাধ্য হলেও সেটাকে আমি অন্তর থেকে সমর্থন করি না; এটার মধ্যে হিপোক্রেসির কিছু তো দেখি না।
Khondokar Masum: “পাশ্চাত্য সমাজে চর্চিত মূল্যবোধসমূহের অনেকটুকু পুরোপুরি ইসলামসম্মত” — you mentioned what I wanted to say, thank you, it’s my pleasure to discussing topics with you.
Hasan Ibn Faruk Khan: স্যার, কয়েকটা সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ছিলো— ১। সেক্যুলারিজমের উৎপত্তির সময় যে রূপরেখা নিয়ে এটার সূচনা হয়েছিলো, তা কি এখনও বাস্তবায়িত আছে না?
২। ‘শব্দ বিভ্রান্তি’ — আমি এটা দ্বারা বোঝাচ্ছি যে, আপনি যে ব্যাখ্যাটা দিয়েছেন সেটা সঠিক। কিন্তু কথা হলো, অধিকাংশ মানুষ পুরো লেখা না পড়তে পারবে, না পারবে বুঝতে। অথচ মাঝখান দিয়ে একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে যে, অমুক স্যার বলেছেন, “আমি সেক্যুলারিজম সমর্থন করি”।
তাহলে কী স্যার এটার দ্বারা মানুষ একটা ভুল মেসেজ গ্রহণ করে ফেলবে না? ধন্যবাদ স্যার।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: কোনো কিছুর উৎপত্তি কোত্থেকে কীভাবে হয়েছে, সে হিসেবে কিন্তু একটা কিছুর মূল্যায়ন হয় না। বরং, সেটার প্রচলন এবং সে বিষয়ে সাধারণ আচরণ কেমন, সেটা দিয়ে সেটাকে মূল্যায়ন করতে হয়। প্রচলিত ধারণা এবং কর্মকাণ্ড ভিন্ন রকম হওয়া সত্ত্বেও উৎপত্তিগত দিকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো কিছুকে একভাবে মূল্যায়ন করা, এটাকে বলা হয় জেনেটিক ফ্যালাসি। যেমন, মাটি থেকে গাছ হয়, গাছ থেকে ফল হয়, তার মানে ফল হলো এক ধরনের মাটি, এরকম মনে করা।
দ্বিতীয়ত, না বুঝে, না পড়ে কেউ যদি ভুল বোঝে, সেটা তার ব্যাপার। আমাদের সমাজে কিছু মুখস্ত কথা চালু হয়ে গেছে। অনেকটা রাজনৈতিক স্লোগান এর মত। অথচ এগুলোর ভিত্তি খুব দুর্বল। সবাই বলে, অমুক-তমুক বলেছেন, সে জন্য বাদবাকি লোকেরাও বলতে থাকে। অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা বলার এই ট্রেন্ড একটি সুস্থ ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা তৈরীর জন্য ক্ষতিকর। আমি চাই এর নিরসন হোক।
একাট্টাভাবে কোনোকিছুকে ভাল বলা বা খারাপ বলা, একাট্টাভাবে কাউকে ভালো বলা, পান থেকে চুন খসলেই কাউকে খারিজ করে দেয়া, এ ধরনের ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টেন্ডেন্সি খুব খারাপ। এটি বন্ধ হওয়া জরুরী।
সবাই অপ্রিয় সত্য বলার সাহস রাখে না। আল্লাহর রহমতে, সেই হিম্মত আমার আছে। সেজন্য আমি কথাবার্তা পরিষ্কার করে বলি।
ভুলভাবে ভুল বোঝাবুঝি থেকে আত্মরক্ষা করার চেয়ে, বরং ঝুঁকি নিয়ে হলেও সঠিক কথাটা বলে দেয়া ভাল। সাময়িকভাবে কিছু ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকলেও, তাতে করে আলটিমেটলি মানুষ সঠিক কথাটা এক পর্যায়ে বুঝতে পারার আশা করা যায়।
Farhan Rahman: স্যার, একটা বিষয় সংযোজন করি, সেটা হলো ডাকসু নির্বাচনে চরমোনাইয়ের ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করে, যারা ইসলামপন্থী। আবার এরশাদের ছাত্রসমাজকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি, যারা সেক্যুলার।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, তাই তো। তারমানে, ব্যাপারটা অন্যকিছু। ক্ষমতার একটা হিসেব-নিকেশ। নিছক ধর্মটা এখানে ইস্যু না।
Md Ab Razzak: একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। তাহলো, কোনো মতবাদে যদি ভালো কিছু থাকে তাহলে এতটুকু বলতে পারি সে ভালো দিকটা ইসলামে অবশ্যই আছে। সে হিসাবে তো নিজেকে নতুন করে অন্য পরিচয় দিতে হয় না। যেমন ধরুন, নারীবাদের কিছু ভালো দিক আছে, যা ইসলামেও আছে। সুতরাং আমি নিজেকে নারীবাদী তো আর বলতে পারি না। ২। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই রাজনৈতিক। তাদের আদর্শে অনেক ক্ষেত্রেই মিল আছে৷ সে হিসাবে একজন আওয়ামী হয়ে নিজেকে কোনো দিক বিবেচনা করে বিএনপি পরিচয় দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: কিছুটা মিলের ভিত্তিতে কারো সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করা যায় না। এদিক থেকে আপনার কথাটাই সঠিক।
তবে কোনো একটা বিষয়ের সাথে যদি কারো কার্যত পুরোটা বা অনেকখানি মিল থাকে, সে বিষয়ে প্রয়োজনে সেই ব্যক্তি যার সাথে তার মিল আছে তার সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারে।
যেমন, একই ময়দানে একই পক্ষের হয়ে কেউ যুদ্ধ করছে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, কেউ যুদ্ধ করছে তার ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে, কেউ যুদ্ধ করছে টাকা পয়সা পাওয়ার জন্য। তাদের নিয়তে ব্যাপক গরমিল থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তারা একই কাজ করছেন। সে হিসেবে তারা পরস্পর পরস্পরকে সহযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারে।
কেউ যখন ঢাকায় থাকে তখন সে নিজেকে রাজধানীবাসী পরিচয় দিতে পারে। একই সাথে সে নিজেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিসেবেও পরিচয় দিতে পারে।
একেকটা পরিচয় যখন আমাদের সামনে আসে তখন কোন প্রেক্ষাপট থেকে আমি পরিচয়টা ধারণ করছি, সেটা হলো বিষয়।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
Md Ab Razzak: স্যার বেয়াদবি মাফ করবেন। কোনো বিষয় স্পষ্ট না হলে আমি শান্তি পাই না। তাই আবারো প্রশ্ন করছি— আপনার উদাহরণটা ঠিক আছে। কিন্তু এই উদাহরণটা হয়তো ক্ষেত্র বিশেষ। কারণ, যদি নাস্তিকতাবাদের অনেক আদর্শ ইসলামের সাথে মিলে যায় তবুও কিন্তু আমারা কখনোই তাদের পরিচয় এলাউ করবো না ।
তদ্রূপ ‘secularism’ এর যে সংজ্ঞা Wikipedia, encyclopaedia ও অন্যান্য বিশ্বকোষে দেয়া হয়েছে, আমার মনে হয়না কোনো ভাবে নিজেকে সেক্যুলার পরিচয় দেয়া যাবে।
সর্বশেষ যেটা না বললেই নয়। তা হলো, একটা মতবাদ সমর্থন করতে হলে অবশ্যই সেই মতবাদের আদর্শ, উদ্দেশ্য, বাস্তবতাকে সামনে রাখতে হয়। সে হিসাবে George Jacob Holyoake ও Mr. Charles Bradlaugh এনাদের ইতিহাস পড়লে তো গোঁড়া ধর্মবিদ্বেষ পাওয়া যায়। এবং তাদের উদ্দেশ্যও ছিলো, ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করা।
দয়া করে বিষয়টা স্পষ্ট করে দিবেন স্যার!
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: যেভাবেই হোক না কেন, আপনি যে পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আপনার উপরোল্লিখিত প্রতিমন্তব্যের প্রথম অংশটুকু সঠিক। আপনার সাথে একমত হয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়— কুফরের সাথে বাস্তব কর্মকাণ্ডে ইসলামের যদি মিল দেখা যায় তাহলে কি আমরা বলবো, ইসলাম এক ধরনের কুফর? অথবা কুফর এক ধরনের ইসলাম?
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়— একজন কাফেরের সাথে একজন মুসলমানের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক; সর্বোপরি মানবিক দিক থেকে অভিন্ন পরিচয় থাকতে পারে। খেয়াল করলে দেখা যায়, কুফর লালন করে এমন ব্যক্তির সাথে একজন ঈমানদারের যে ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক; সর্বোপরি মানবিক সাযুজ্য, সেটার ভিত্তি কিন্তু কুফর নয়।
সামাজিক সাযুজ্যের ভিত্তি সামাজিক ব্যবস্থাপনা। সাংস্কৃতিক সাযুজ্যের ভিত্তি হলো একই এলাকায় বসবাস করার কারণে ঐতিহ্যগতভাবে প্রাপ্ত অভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। এভাবে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সাযুজ্যের ভিত্তি সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের অভিন্ন উপাদানসমূহ। এগুলোর কোনোটার সাথে কুফরের প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক নাই।
সেজন্য একজন বিধর্মীর সাথে একজন মুসলিমের যেসব ক্ষেত্রে মিল আছে সেসব ক্ষেত্রে তারা অভিন্ন পরিচয় ধারণ করতে পারে। এতে করে তাদের বৃহত্তর লাইফ-ভিউ এক হয়ে যায় না।
কথার কথা, নাস্তিক্যবাদের ভিত্তি হিসেবে নাস্তিকেরা মানবতাবাদের কথা বলে। বরং তারা নিজেদেরকে মানবতাবাদী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানবতাবাদ যেহেতু নাস্তিকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে চর্চিত, তারা নিজেদেরকে মানবতাবাদের পরিচয় দেয়, সে হিসেবে আপনি যদি মানবতাবাদকে নাস্তিকতার সমার্থক মনে করে পরিত্যাজ্য মনে করেন; সেই হিসেবে দেখবেন, আপনার জন্য কোনো সেক্টরে কোনো কিছু আর অবশিষ্ট নাই। এভাবে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
মুসলমানেরা দেশে দেশে মানুষের নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকার করে নিয়ে সেগুলোকে পেট্রোনাইজ করেছেন। এভাবেই ইসলামী সভ্যতা গড়ে উঠেছে। যদি আপনি ইতিহাস পড়েন তাহলেই জানতে পারবেন।
আর সেক্যুলারিজমের যেসব কেতাবি সংজ্ঞার কথা আপনি বলেছেন সেগুলোর উপর আমি কেন গুরুত্ব দিচ্ছি না, সেটা আমি পোস্টের মধ্যে উল্লেখ করেছি। আপনাকে এই বিষয়ে genetic fallacy’র কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
Saifuddin Ahmed: পুরোটা পড়লাম স্যার। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখলাম। তবে একটা ভাবনা মাথায় আসলো, মধ্যযুগে তথা খিলাফতকালীন তো সেক্যুলারিজম ছিলো না। তারপরেও সেখানে মুসলিম-অমুসলিম সহাবস্থান ছিলো।
সেক্যুলারিজমের বিপক্ষে বর্তমান ইসলামিস্টদের এলার্জিটা ঠিক কোথায়? ১) অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে হবে এজন্য? ২) সেক্যুলার আইন ও কোরআন মুখোমুখি হলে কোনটাকে গ্রহণ করতে হবে? যেমন: সম্পত্তির উত্তরাধিকার বা শাতিমে রাসূলের শাস্তি সংক্রান্ত ইস্যুতে সেক্যুলারিজম কি মুসলমানদের পূর্ণ নির্ভরতা দিতে পারছে?
আমার মনে হয়, ইসলামিস্টদের সেক্যুলারিজম নিয়ে এলার্জি ২ নং ইস্যুটা নিয়ে, কিন্তু তারা আবেগ দেখিয়ে সবসময় হাইলাইট করে ১ নং (আদতে যা উচিতও না, কারণ ইসলামী খিলাফতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে অমুসলিম ছিলো)।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: তখনকার সময়ে কার্যত সেক্যুলারিজমের সফট ভার্সন চলছিলো, নামটা ছিলো না যদিও। চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বিচার করলে, বিশেষ করে হিজরতের পরপর নব গঠিত মদিনা রাষ্ট্রের চরিত্র ছিলো ইনক্লুসিভ এন্ড ন্যাশনালিস্টিক। কয়েক বছেরর সে সময়টাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ইহুদীরা যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করতো তাহলে ইসলামী সাম্রাজ্যে যে ইনক্লুসিভনেস ছিল কেন্দ্রের বাহিরে অন্যান্য জায়গায়, তা এমনকি কেন্দ্রেও
Md Saifuddin: আমার মনে হয়, মদিনা সনদের রাষ্ট্রকে কয়েক বছরের বলাটা ভুল। স্পষ্টভাবে মদিনা সনদ (চুক্তি) কখনই বাতিল হয় নি।
Fahim Muhammad: স্যার, আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করলেন এটাতে তো কারোরই ফান্ডামেন্টাল দ্বিমত নাই। শারম্যান জ্যাকসনের ইসলামিক সেক্যুলারের প্রস্তাবনাটা এমন। এই ধরনের আলাপকে মোটেই ইসলামের ডিসকার্সিভ ট্র্যাডিশনের বাইরে বলা যায় না। শেষের দিকে এবং টুকিটাকি ডিটেইলস ছাড়া ফান্ডামেন্টাল পয়েন্টে তো এই চিন্তাকে outside the fold of Islam বলার সুযোগ নাই।
কিন্তু শাহ আব্দুল হান্নানের রুহানী আওলাদরা কি সেক্যুলারিজমকে এভাবে বোঝেন? তারা তো paradigm/worldview/weltschuuung আকারে সেক্যুলারিজমকে আপনায় নেওয়ার কথা বলেন। শুধু তাই না, সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা করা তাদের কাছে “মতাদর্শিক মতলববাজি”। আর সেক্যুলারিজম হলো পারফেক্ট নিউট্রাল গ্রাউন্ড। ইসলাম যেমন বলে ইসলাম হচ্ছে ফিতরাতি দ্বীন ঐরকম।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক: যেমন গণতন্ত্র। গণতন্ত্রকে কেউ যদি একটা জীবন আদর্শ বা ওয়ার্ল্ড ভিউ হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে সেটা ইসলামসহ অপরাপর প্রতিদ্বন্দ্বী জীবনাদর্শসমূহের সাথে অবশ্যই সাংঘর্ষিক হবে।
তা না করে কেউ যদি গণতন্ত্রকে রাজতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের পরিবর্তে ‘মন্দের ভালো’ বিকল্প হিসেবে, নিছক একটা শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে সেই অর্থে গণতন্ত্র কখনো ইসলামবিরোধী হতে পারে না। একই কথা অনুরূপ ধরনের আদর্শ বা নামগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
একজন মূর্তিপূজারী আর একজন মুসলমান, মানবিক দিক থেকে উভয়ই মানুষ। কিন্তু, বিশ্বাস ও জীবনাচরণের দিক থেকে তারা পরস্পর হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এতদসত্ত্বেও, হতে পারে প্রতিবেশী হিসেবে, অর্থনৈতিক নানা প্রয়োজনে, বা কিছু কিছু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, হতে পারে ভাষাগত দিক থেকে, তারা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত।
পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পূর্ন ভিন্ন, এমন দুটি পক্ষ কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে একই পক্ষভুক্ত হতে পারে।
সুতরাং, আমরা যখন কাউকে বিশেষ কোনো কিছু হিসেবে চিহ্নিত করি, তখন আমাদের বিবেচনা করতে হবে বিষয়টাকে আমরা কোন দিক থেকে দেখছি।
এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করা উচিত বলে মনে করি। তা হলো, আমরা যখন কোনো বিষয়ে কোনো একটা পরিচিতি তুলে ধরব, সেটি শ্রোতারা ধরতে পারছে কিনা, এবং আমার কমিউনিটি আমাকে ভুল বুঝতেছে কিনা, সেটাও বিবেচনা দরকার। কোনো বিষয়ে এ ধরনের স্থান-কাল-পাত্র তথা প্রেক্ষিত বিবেচনা না করে একট্টাভাবে কোনো কিছুকে কোনো একভাবে চিহ্নিত করা, এটি সঠিক নয় বলে মনে করি।
কথাগুলো একটু জটিল বা গোলমেলে হয়ে গেল হয়তোবা। তোমার মতো বুদ্ধিমান তা বুঝে নিবে। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকো।
Fahim Muhammad: আপনার কথা তো স্পষ্ট। এখানে গোলমাল হওয়ার তো সুযোগ নাই। এটার সাথে ফান্ডামেন্টাল লেভেলে কোন দ্বিমতও নাই। কিন্তু ইসলামপন্থীদের যে অংশটা আজকাল নিজেদের সেক্যুলার বলে পরিচয় দিচ্ছেন তারা কি আপনার কথা বোঝেন? এদেরকে বোঝাতে গেলে তো বলে ওঠেন অন্টোলজি-এপিস্টেমলজি অনেক কঠিন বিষয়, ওনারা যা বোঝেন সেই বুঝ নিয়েই থাকতে চান।
Md Saifuddin: সেক্যুলারিজমের জন্মের সাথে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। যে সামাজিক পরিস্থিতিতে রেডিক্যাল সেক্যুলারিজম জন্মেছে, সেটি ছিল চার্চ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিন্যাসের সমালোচনায়। ভেবে দেখুন, সবখানে সেক্যুলারিজম কিন্তু একই ধরনের পথে যায়নি। কোনো কোনা জায়গায় চার্চকে স্বীকার করে নিয়ে সেক্যুলারিজম চর্চা হয়েছে। ইসলামের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো সহজ। ক্রিস্টিয়ানিটির তুলনায় ইসলাম কার্যত একটি স্যেকুলারবাদী ধর্ম। এ কারণেই, এই পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়টি থেকেই যায়।
Rahmatullah Khandker: ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বুঝায়? উত্তর দিয়েছেন শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল মুনাজ্জিদ:
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি নতুন মতবাদ। এটি একটি ভ্রান্ত আন্দোলন। এর উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করা, দুনিয়া ও দুনিয়ার মজা নিয়ে মেতে থাকা। আখিরাতকে ভুলে গিয়ে, অথবা আখিরাতকে উপেক্ষা করে পার্থিব জীবনকে মূল লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা। পরকালের আমলের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করা ও গুরুত্ব না দেওয়া।
ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই হাদিসটি হুবহু মিলে যায়: ‘দিনার ও দিরহামের পূজারি ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সন্তুষ্ট থাকে, আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাঁটাবিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।’ [সহীহ বুখারি, ২৮৮৭]
উল্লেখিত বিশেষণের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও পড়বে যারা ইসলামের কোনো একটি কথা বা কাজকে সমালোচনার বিষয়বস্তু বানায়। যে ব্যক্তি ইসলামি শরিয়াহকে বাদ দিয়ে মানব রচিত আইনে শাসনকার্য পরিচালনা করে সেই ধর্মনিরপেক্ষ। যে ব্যক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমন, ব্যভিচার, মদ, গান-বাজনা, সুদি কারবার ইত্যাদিকে বৈধ বিবেচনা করে এবং বিশ্বাস করে যে, এগুলো থেকে বারণ করা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও ব্যক্তিগত স্বার্থে বাঁধা দেওয়ার নামান্তর, সে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ।”
Md Saifuddin: মাসিক আল কাওসারের লেখাটি খুবই ভাল একটি লেখা। এই লেখাটি মূলত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্ধে বলার মত সব কিছু নিয়ে এসেছে। দেখতে হবে, মোজাম্মেল হক স্যারের আলোচনা কিন্তু ঠিক এই লেখাটির পরই শুরু হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে কী বোঝাবে, এই দায়িত্ব যতদিন বামবাদী, নাস্তিকবাদীদের হাতে ছাড়া হবে, ততদিন একে বাজে ভাবেই করবে তারা। যেভাবে বলছিলাম, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের দুটাই ধর্মনিরপেক্ষ হলেও, একটাতে নিকাব বৈধ, আরেকটাতে মাথায় কাপড় দেয়াও অবৈধ। এই নিকাব বৈধ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা কাউসারের লেখাটিতে সংগত কারণেই অনুপস্থিত।
ইসলামের বিষয়টি নিয়েও স্যারের লেখায় ভাল কিছু প্রশ্ন আছে। এত ইসলামী ব্র্যান্ডের মধ্যে কোন ব্র্যান্ডকে স্বীকার করা হবে? সেটি করলেও, কিসের ভিত্তিতে সহাবস্থান নিশ্চিত করা যাবে। নানান প্রশ্নে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা চলেই আসে। আর রাজনীতির কথায়, আল কাউসারের লেখা আর স্যারের লেখায় কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। সম-অধিকারের যে দাবী কোনো মতবাদ করে, সেটি পূরণ না করলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না থাকলে, সবখানেই ধর্মনিরপেক্ষতা হোক আর ইসলামী, যে নামেই হোক, অধিকার ভূলুন্ঠিত হবে। ধন্যবাদ।