‘সিএসসিএস সোশ্যাল মুভমেন্ট’ গ্রুপে কয়েকদিন আগে polygamy শিরোনামে একটা ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। সেটি দেখবো বলে মন্তব্য করেছিলাম। ইতোমধ্যে সেটি দেখেছি। মূলত ভিডিও আলোচনাটির ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করে সেটি ভালো করে পড়েছি।

শুরুতে বলা হয়েছে, ‍“Allah has spoken on this and we are not here to discuss whether it is good or bad.” এরপরে, কেন এই আলোচনা, সে প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, ‍“what we are bringing to the table, when we discuss polygamy, is how it is done, the effects that it has on individuals, as a result of how it is executed.”

এরপর আলোচকদের একজন তার অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে পলিগ্যামিকে ‍“toxic, judgy and negative” বলার সাথে সাথে একে এক ধরনের ‍“spiritual abuse” হিসেবে বলেছেন। তার মতে, এর কারণ হলো এটি ‍“not being executed properly.” যার ফলে ‍“it is destroying women, their very souls.”

এই ভিডিও আলোচনায় পলিগ্যামিকে জিহাদের সমতুল্য হিসেবে একজন আলোচক মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়, ‍“polygamy, even if it’s done correctly, is jihad in itself.”

অতপর, সঠিক পদ্ধতি কী হবে সে সম্পর্কে একজন আলোচক বলেছেন, ‍“I think it is very important that the woman is given the choice…. if a man wants to engage in polygamy that’s his right. Ok. But come to your wife. come to your wife openly and say, this is what I would like to do.”

এমনকি, একজন আলোচকের মতে, প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করার ব্যাপারে ইচ্ছুক হাজবেন্ডের দায়িত্ব হলো এ বিষয়ে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা। তার ভাষায়,

‍“Are men even sitting down and talking to their kids, and talking about their choices? … This is what I am saying about having real, concrete discussions around this; from the point of intention, not execution.”

এনিওয়ে, স্ত্রী যদি স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি না দেয়, সেক্ষেত্রে উক্ত আলোচকের দৃষ্টিতে, সংশ্লিষ্ট পুরুষটির ‍“emotional maturity and intelligence to be able to manage” এর মধ্যে ঘাটতি আছে, বুঝতে হবে।

সাউন্ড রেকর্ড ভালো না হওয়ায় এ বিষয়ে এর আগের একটা আলোচনা রেকর্ড করা সত্ত্বেও প্রচার করা হয়নি। সেখানে একজন আলোচক বলেছেন ‍“most of the man going for polygamy are actually just boys”, এমন কথা জানালেন একজন আলোচক।

একজন আলোচকের মতে, যারা পলিগ্যামি করতে চান তারা ‍“very very special type of man”। তারা ‌‍“হাই লেভেল কমিউনিকেশন” মেন্টেইন করেন। তারা যে হাই লেভেল কমিউনিকেশন মেন্টেইন করে সেটার স্বরূপ কেমন হবে তা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‍“when the thought even comes into your mind, sit with your wife, sit with your family and have this discussions…. She should be known.”

শুধুমাত্র আগের স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া যথেষ্ট নয়। উক্ত আলোচকের মতে, যাকে সংশ্লিষ্ট পুরুষ ব্যক্তিটি বিয়ে করতে যাচ্ছে তার সাথে তার আগের স্ত্রীর কথাবার্তা হতে হবে। কথাবার্তায় যদি বনিবনা হয় তাহলে সে তাকে সম্মতি জানাবে, ‍“now that you are coming in, as number two.”

মোদ্দাকথা, উক্ত ভিডিও বক্তব্যের আলোচকদের মতে, ‍“essentially polygamy needs, it requires clear, healthy, effective communication from the start… it needs to be executed in a moral Islamic manner.”

এত সত্ত্বেও কেউ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলে তখন তার স্ত্রী হিসেবে একজন নারী কী করবে সে ব্যাপারে তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে দুই ধরনের পরামর্শ আছে।

এই হল পলিগ্যামি নিয়ে উক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ।

প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু সারসংক্ষেপটা দিয়েই শেষ করব। আমার আশঙ্কা, যদি সম্ভব হতো তাহলে নারীরা একচেটিয়া ভোট দিয়ে বহুবিবাহ প্রথাকে রদ করে দিত। তা করতে না পারলেও অন্ততপক্ষে এই আলোচনাতে অংশগ্রহণকারী নারীরা এ বিষয়ে যা বলেছে সেটার সাথেই তারা এক মত হতো।

বহুবিবাহের যে পদ্ধতির কথা এখানে বলা হলো, আমি অনুসরণযোগ্য কারো ক্ষেত্রে এমনটা দেখি নাই। এমন ধরনের কথা কোরআন, হাদীস ও সীরাতের কোথাও পাই নাই। ইনাদের বক্তব্যের মর্ম অনুসারে, আল্লাহর রাসূল, তাঁর সাহাবীগণ এবং তাদের পরবর্তী সর্বোত্তম লোকজন, তাঁরা এই ‌‘আলোচনা পদ্ধতি’ অনুসরণ না করে ভুল কাজটি করেছেন! যার ফলে স্বভাবতই সলফে সালেহীনদের মধ্যে যারা বহু বিবাহ করেছেন (ইনফ্যাক্ট কারা করেননি, সেটাই এখন হতে পারে গবেষণার বিষয়) তাদের স্ত্রীরা ছিল নির্যাতিত।

বহুবিবাহের এই প্রসঙ্গটির সাথে সম্পর্কিত বিষয় হলো দাসীদেরকে বিয়ে করার বিষয়টি। এসব বিষয়ে কারও মধ্যেই আজকাল স্বচ্ছ ধারণা দেখি না। ‌‘দাসীর সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক হলো এক ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক’ এটি আমার একটা বিস্তারিত লেখার শিরোনাম। এই লিংকে পাবেন। তাই এই বিষয়ে এখানে আর কথা বাড়াচ্ছি না।

গোপন বিয়ের প্রসঙ্গটি সেখানে আসে যেখানে বিয়ে করা কঠিন বা অসম্ভবপ্রায়। তেমন পরিস্থিতিতে, হোক সেটা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিয়ে, বিয়েটাই যেখানে সহজসাধ্য ব্যাপার সেখানে গোপন বিয়ের কোনো প্রয়োজন বা প্রসঙ্গ থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনে রাখতে হবে, গোপন বিয়ে কিন্তু ধর্মের দৃষ্টিতে আইনসঙ্গত বিয়ে।

যেখানে আইন এবং নৈতিকতার সংঘাত দেখা দিবে সেখানে আইনের বিষয়টাকে সমাধান না করে নৈতিকতার প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হচ্ছে একটা ভুল পদ্ধতি। অর্থাৎ আগে আইনগত বাধা দূর করতে হবে। এরপরে মনস্তাত্ত্বিক যে সামাজিক জটিলতা, সেটা দূর করতে হবে। তারপরে নৈতিক বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক তথা কার্যকর হয়ে উঠবে।

গোড়ার দিক থেকে, অর্থাৎ তাত্ত্বিক দিক থেকে নৈতিকতা আগে হলেও, কাউকে বা কোন কিছুকে যখন আপনি ডিল করবেন তখন অর্থাৎ বাস্তবে অনুসরণের দিক থেকে আইন অগ্রাধিকার পাবে। এটি সামগ্রিক কথা। সবক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

আমরা এই কথাগুলো বলছি এমন প্রেক্ষাপটে যেখানে বিশেষ করে পাশ্চাত্য বিশ্বে পুরুষের বহু বিবাহ হচ্ছে বেআইনি। আমাদের দেশে এটি আইনসঙ্গত হলেও এতে এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছে যা ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক।

সংশ্লিষ্ট সমাজের সামাজিক গঠনগত ত্রুটি এবং সেখানকার লোকদের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যার কারণে কোনো ন্যায়সঙ্গত আইনি ব্যবস্থা, বাস্তবায়নের দিক থেকে সমস্যা সমাধানের উপায় না হয়ে বরং অধিকতর সমস্যার উদ্ভব ঘটানোর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বহুবিবাহ তো বটেই, স্বয়ং বিবাহ ব্যবস্থার কারণেই কত নারী নির্যাতিত হচ্ছে দেশে দেশে …! কিছু সমস্যাকে সমাধানের জন্য নারীরা বিয়ে করে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক নারী এই বিয়ে ব্যবস্থার কারণেই স্থায়ীভাবে সমস্যার গ্যাড়াকলে আটকে যায়। আশেপাশে যা অহরহ দেখছি। তাই মাথাব্যথায় মাথাটাই কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়ার মত নির্বুদ্ধিতা না করে, বরং মাথাব্যথা সারানোর ব্যবস্থা করাটাই যুক্তিসঙ্গত।

পরিশেষে প্যারাডাইম কনফ্লিক্টের পয়েন্টে একটুখানি বলি। মনে করেন দুইটা প্যারাডাইমের ইন্টারসেকশনে একটা কমন এলিমেন্ট আছে। উক্ত বিষয়ের সাথে ন্যাসেসারিলি কানেক্টেড এমন বিষয় যা একটা প্যারাডাইমের মধ্যে আছে কিন্তু অন্য প্যারাডাইমের মধ্যে নাই, সেই বিষয়ে ব্যক্তির অবস্থান বিবেচনা করে আমরা বুঝতে পারি, কোনো ব্যক্তি আসলে কোন প্যারাডাইম থেকে উক্ত কমন এলিমেন্টের ব্যাপারে কথা বলছে। অ্যাডাপ্টেবিলিটি মুডকে কেউ যখন স্থায়ী সমাধান হিসেবে গ্রহণ করে তখন বুঝতে হবে আসলে সে অন্তত ঐ ইস্যুতে তার দাবিকৃত প্যারাডাইমের মধ্যে নাই।

এই বিষয়ে এখানে আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। প্যারাডাইমগত ইন্টারসেকশন এবং কনফ্লিক্ট নিয়ে আমি একটা স্বতন্ত্র লেখা লিখব ইনশাআল্লাহ। প্যারাডাইমের কথাটা এখানে কেন এনেছি, এটাও নিশ্চয় এতক্ষণে আপনারা বুঝে ফেলেছেন।

ট্রান্সক্রিপ্টটা তৈরি করে দেয়ার জন্য সিএসসিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মাসউদুল আলমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কেউ চাইলে সেটি সংগ্রহ করতে পারবেন এই লিংকে

এবং সেটার উপর আমি যে মার্কিং করে অধ্যায়ন করেছি, সেই কপিটাও চাইলে আপনারা নিতে পারবেন এই লিংকে

টিকা: পলিগ্যামি সংশ্লিষ্ট এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে কিছু না কিছু বলতেই হবে; অথচ এই লেখার মধ্যে সেগুলো আসেনি। এর কারণ হলো, এটি একটি আলোচনার সারসংক্ষেপ, এবং সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ এটি এই বিষয়ের উপর কোনো পূর্ণাঙ্গ লেখা নয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *