সাধারণত কোনো নারী যখন কোথাও ভিক্টিমাইজড হয় তখন সাধারণত বলা হয়, ভিক্টিম ব্লেইমিং করা যাবে না। যারা উক্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নারীর কোনো জেনুইন বা সম্ভাব্য দায় বা দোষ নিয়ে কথা বলে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত নারীর পক্ষ নিয়ে লোকজন তার সম্পর্কে বলতে থাকে, ‘সে তো ভিক্টিম ব্লেইমিং করছে’। মোদ্দাকথা হলো, ভিক্টিম ব্লেইমিংকে খুব খারাপ মনে করা হয়।
হ্যাঁ, ভিক্টিম ব্লেইমং আসলে খুব খারাপ ও অমানবিক, যখন এই কাজটি করা হয় অপরাধটাকে আড়াল করা এবং আসল অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য।
কিন্তু লক্ষ করেছি, এ ধরনের ইস্যুতে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতার অংশ হিসেবে ভিকটিমের কোনো অনস্বীকার্য দায়, দোষ, অসচেতনতা, বাড়াবাড়ি বা অন্যায়ের ব্যাপারে কথা বললেও ভিক্টিম ব্লেইমিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়। এটা কেমন কথা?
দুনিয়াতে এমন কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কি সংঘটিত হয় বা হতে পারে যাতে শুধু একপক্ষই সর্বাংশে দায়ী? যখন কোনো সড়ক দুর্ঘটনা হয় তখন আমরা উভয় পক্ষের ভুলগুলোকে চিহ্নিত করে কথা বলি। কোথাও আগুন লাগার পরে সেখানে এই সুবাদে কেউ কেউ চৌর্যবৃত্তিতেও লিপ্ত হতে পারে। সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতেও এমনটা হয়েছে।
চুরির বিচার এক কথা আর অসাবধানতাবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো কিংবা সঠিকভাবে অগ্নিনির্বাপণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে না পারার জন্য কাউকে দায়ী করা, এরকম যাতে আর না হয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এটা তো আলাদা ব্যাপার। ঘটনার একটা অংশের বিচার করার মাধ্যমে ঘটনার অন্যান্য দিকগুলোর সম্ভাব্য রিভিউ তো নাকচ হয়ে যায় না।
হতে পারে কারো সীমানায় কেউ অনধিকার প্রবেশ করেছে। এরপর জমির মালিক অনধিকার প্রবেশকারীর বিরুদ্ধে এমন কিছু করেছে যা বেআইনী ও বাড়াবাড়িমূলক। ওভাররিয়েক্ট করার কারণে জমির মালিককে শাস্তি দিতে হবে, এটা যেমন ন্যায়বিচারের দাবী, তেমন করে ভিক্টিম যে ইনিশিয়েলি সীমালঙ্ঘন করেছে, কিংবা কোনো পাল্টা অন্যায় করেছে, তার জন্য তাকে শাস্তি বা তিরস্কারের সম্মুখীন করা হবে, এটাও তো ন্যায়বিচারের দাবী। এজন্য ন্যায়বিচারকে ব্লাইন্ড জাস্টিস বলা হয়।
দুনিয়ার সব ঘটনায় যদি আমরা বিবদমান পক্ষসমূহের দায়দায়িত্ব বিবেচনা করে কাকে কতটুকু শাস্তি দেয়া যায় বা কাকে কতটুকু মার্জনা করা যায় তা নির্ধারণ করি এবং এই প্রক্রিয়াতে বিচার করাকেই যদি আমরা ন্যায়বিচার বলি, তাহলে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে কেন এর ব্যতিক্রম হবে?
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, অপরাধ মাত্রই অন্যায়। কিন্তু অন্যায় মাত্রই অপরাধ নয়। এটা আইন ও নৈতিকতার পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্যের ব্যাপার। আমরা জানি, আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক হচ্ছে নেসেসারি রিলেশন; আইডেন্টিকেল বা অকেশনাল নয়।
নৈতিক মান যত উন্নত, আইনের প্রাসঙ্গিকতা তত কম। এর বিপরীতে, যেখানে নৈতিক মান ও মূল্যবোধ যত দুর্বল, সেখানে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের বিষয়টি তত এক্সক্লুসিভ ও সিরিয়াস ম্যাটার। আইন ও নৈতিকতার এই বিপরীত অনুপাত সম্পর্ক নিয়ে পড়ুন এখানে।
মনে রাখতে হবে, সবকিছুকে আইনের দৃষ্টিতে দেখা, আইনী প্রক্রিয়ায় সব সমস্যার সমাধান করতে চাওয়া খুব বাজে কাজ। অবশ্য একটা অসুস্থ সমাজে সার্বিকভাবে মানবিক উন্নয়নের চেয়ে আইনের ভাষাকে প্রেফার করা হবে, এটি স্বাভাবিক। বিশেষ করে প্রতিশোধ স্পৃহা যখন গণমানসে মজ্জাগত হয়ে যায় তখন গণপিটুনি বা ‘ফাঁসি চাই’ হয়ে দাঁড়ায় তাদের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম সমাধান। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নৈতিকতা যে আইনের ভিত্তি, তা মানুষ বেমালুম ভুলে যায়। ‘ভুলে যায়’ মানে সেই জনপদের জনপরিসর বা পাবলিক স্ফিয়ার থেকে ন্যায্য ও হক কথাগুলো হারিয়ে যায়। অথবা, ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবীদের ফেইক কথাবার্তার আড়ালে সেগুলো চাপা পড়ে যায়।
দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রতিটা ঘটনার একটা ইমিডিয়েট ও পার্টিকুলার আসপেক্ট থাকার পাশাপাশি দুনিয়াতে কোনো ঘটনাই ওয়ান-টু-ওয়ান হিসেবে তথা একক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা (বা দুর্ঘটনা) হিসেবে ঘটে না। তাই ইমিডিয়েট ও পার্টিকুলার কোনো ইনসিডেন্টের বিচার করার বা চাওয়ার পাশাপাশি এ ধরনের সমস্যা হওয়ার যে পথ বা অনিবার্যতা, সেটা বন্ধ করার উপায়ও খুঁজতে হবে। একটার কারণে অপরটাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। যে কোনো সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে আশু করণীয় সম্পন্ন করার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান কী এবং কীভাবে আমরা তা পেতে পারি তা নিয়ে ভাবতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘চাই অ-প্রগতিশীল ছাত্রীদের জন্য অন্তত ১টা ছাত্রী হল’ শিরোনামে আমার লেখাটা একটা হলিস্টিক ওভারভিউ। আমাকে যারা ভিক্টিম ব্লেইমিংয়ের জন্য অভিযুক্ত করেছেন তাদের অন্তত দু’জনকে আমি ভিক্টিম ব্লেইমিং নিয়ে প্রশ্ন করেছি। তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
তথাকথিত প্রগতিশীল ঘরানার কিছু কিছু লোককে দেখেছি, যাকে তারা থ্রেট বলে মনে করে তার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট কিছু কথা প্রচার করা শুরু করে। বছরের পর বছর, দশকের পর দশক সেই মিথ্যা কথা বলতে বলতে পরবর্তী প্রজন্ম বা এবসেন্টিদের কাছে সেগুলোকে তারা ‘ফ্যাক্ট’/‘ট্রুথ’ হিসেবে চালিয়ে দেয়। আমি যেহেতু একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়েল এবং একজন পাবলিক ফিগার, আমার ব্যাপারে যেসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা তাদের মহলে ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য’ হিসেবে ইতোমধ্যে চালু করেছে, সেগুলোর মতো—‘ও তো ভিক্টিম ব্লেইমিং করে’—এ ধরনের দাবীকেও তারা চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে, তাই এই লেখা।
আমি পপুলারিটি পেতে চাই, কিন্তু আমি পপুলিস্ট নই। তাই অপ্রিয় ও তিক্ত সত্যগুলোকে অনায়াসে উচ্চারণ করতে আমার বাঁধে না। আমার সাইটে ‘পোস্টার ও ব্যানার সমগ্র’ নামে একটা বই আছে। সেখানে অনেক কথা পাবেন যা আপনার ভালো লাগতে পারে। চেক করে দেখতে পারেন।
চবি’তে চলমান ছাত্রী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে একটু আগে একজনের মন্তব্যের উত্তরে আমার দেয়া প্রতিমন্তব্যটা তুলে ধরে আপাতত এখানে শেষ করছি: ‘‘ভিক্টিম এবং ভিক্টিম পক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আন্দোলন, রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে একহাত নেওয়ার একটা চান্স, আবার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরোধী পক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপকে সাইজ করার একটা সুযোগ, এবং প্রগতিশীলদের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে তাদের প্রগতিশীলতার সীমারেখাকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে নেওয়া এবং তাদের দৃষ্টিতে ভাল কাজ, যেগুলো অনেকের দৃষ্টিতে খারাপ কাজ, সেগুলোকে সামাজিকভাবে বৈধ এবং সহনীয় হিসেবে এস্টাবলিশ করা।’’
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
মোহাম্মদ নাফিস মোল্লা: ভিক্টিমকে দোষারোপ করা আর সাবধান করা দুটো আলাদা ব্যাপার। আমার ঘরে চুরি হয়েছে, আর আমি চাইলে চোরকে খুঁজে বের করতে পারবো, ঘটনা যদি এমন হয়, তাহলে আমার উচিত হবে আগে চোরকে খুঁজে বের করা এবং পরে ভবিষ্যৎ চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ কোনো একটা অন্যায় সংগঠিত হলে আগে অন্যায়ের বিচার, পরে ভিক্টিমের অসাবধানতা নিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং ভবিষ্যতে এমন কিছু রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেই আলোচনা। এখন কোনো অন্যায় সংগঠিত হলে আমরা যদি আগেই ভিক্টিমের অসাবধানতা নিয়ে কথা বলি তাহলে জনগণের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি হবে এবং মূল অন্যায়কারীরা আলোচনার অন্তরালে চলে যাবে। যেটা আমরা সব ইন্সিডেন্টের পরেই দেখি মানুষ দুই দলে ভাগ হয়ে যায়।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, স্যার।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সামাজিক কোনো সংকট বিচ্ছিন্ন নয়, যা আমি পোস্টে বলেছি। এর থেকে কেউ কেউ ভুল বুঝে মনে করতে পারে, এক একটা বিষয়কে গুরুত্ব বিবেচনা করে আগে সমাধান করে এরপর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান করা হবে। যেমন, আগে বিচার, তারপর নৈতিকতার কথা।
তাৎক্ষণিক বিচারের কথা আমার জানা মতে ইসলাম ছাড়া আর কেউ বলে না। ইসলামের ফৌজদারী দণ্ডবিধি খুবই প্রিসাইস। ওয়ান-টু-ওয়ান। এখানে পরিবেশ এমন, যে কোনো তত্ত্ব ও মতের পক্ষে কেউ উপযুক্ত মনে করলে বলতে পারবে, কিন্তু ইসলামের কথা বলা যাবে না।
সে যাই হোক, প্রচলিত সিস্টেমে কখন বিচার শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। এমনকি দ্রুত বিচার ইত্যাদিও কোনো সমাধান নয়। সমাজ মানসের ভিতর থেকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ব্যাপারে একটা প্রতিরোধ গড়ে না উঠলে শুধু লিগ্যাল এপ্রোচে কোনো সামাজিক সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব না। এর বিপরীতে এটাও কোনো কাজের কথা নয় যে আগে সমাজ মানস পূণর্গঠন হবে, তারপর অপরাধ ঘটলে তার বিচার করা হবে। কারণ সোশ্যাল ডিভেলপমেন্ট একটা ইনডিটারমিনেইট অ্যান্ড আনএনডিং প্রসেস। অতএব, কাজের কাজ হচ্ছে, সবগুলো কাজ একসাথে যার যার মতো করে করতে থাকা।
বিচারের দাবীকে যদি রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত স্বার্থবিবেচনা হতে আলাদা করা যেত তাহলে আমি অবশ্যই এই আন্দোলনে ফিজিকেলি সমর্থন দিতাম। ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরী সরকারের সময়ে পুলিশ-আর্মির বিরুদ্ধে স্টুডেন্টদের আন্দোলনে, ছাত্রদের বেতন বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমি সশরীরে সমর্থন দিয়েছিলাম। টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। আমি ভীতু লোক নই। আমি পূর্বেই ব্যাখ্যা করেছি, কেন আমি এই আন্দোলনে বিরোধিতা বা সমর্থনের কোনোটাই করতে পারছি না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মোহাম্মদ নাফিস মোল্লা, এটা (ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক মূল্যবোধ ও গণসম্মতির ভূমিকা) পড়তে পারো। সিলেটের ঘটনার পরে লিখেছিলাম।
মোহাম্মদ নাফিস মোল্লা: ধন্যবাদ স্যার। সময় নিয়ে পুরোটা পড়লাম। বিষয়টা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারলে ভালো হতো। হয়তো কখনো সময় করে বসা হবে, ইনশাআল্লাহ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যে নয়, বরং সামাজিক নানাবিধ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার চর্চা থাকা উচিত। কিন্তু কেন জানি না, এখানকার লিবারেল মানে প্রগতিশীলরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ইল্লিবারেল, ইনটলারেন্ট এবং এগ্রেসিভ। আমরা যারা ক্লাসিকাল মূল্যবোধে বিশ্বাস করি আমাদেরকে পাবলিক স্ফিয়ারে কোনো স্পেস দিতে তারা রাজি নয়। আনফরচুনেটলি দিস ইজ মাই বিটার এক্সপেরিয়েন্স উইথ দেম।
সে যাই হোক, ওই যে কথাটা, quality does matter, আমি নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নেব, ইনশাআল্লাহ। আমার যারা সরাসরি ছাত্র, তারা আমাকে অন্য যে করো চেয়ে বেশি জানে। তাই আমি তাদের কাছ থেকে বেশি সহযোগিতা আশা করবো, এটাই তো স্বাভাবিক।
মোহাম্মদ নাফিস মোল্লা: আমি সর্বদাই মুক্ত আলোচনার সাথে আছি এবং থাকবো, ইনশাআল্লাহ। আপনি আমাদের ক্লাসে এবং/অথবা বাইরে যতটা স্পেস দেন সেটা অবশ্যই ভার্সিটির একজন স্টুডেন্ট হিসেবে অনেক বড় পাওয়া স্যার। 🖤
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: খুব সম্ভবত আমি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যার সব ক্লাস রেকর্ড করা হয়। আমি করি। স্টুডেন্টরাও করে। অনেক ক্লাস আমি ‘যুক্তি ও জীবন’ চ্যানেলে আপও করেছি। সব আনএডিটেড। এরপরও শুনি বিভিন্ন গ্রুপে প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারী লোকজন আমার ক্লাস পারফরমেন্স সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেছে। কী আশ্চর্য! তোমরা যারা আমার সরাসরি ছাত্র, এটি তোমাদের দায়িত্ব আমার ইন্টিগ্রিটি ও পারফরমেন্স নিয়ে নিরপেক্ষভাবে কথা বলা। ডিডস আর ওয়ার্ডস।
M Saiful Islam: স্যার, ক্যাম্পাসে যেসব প্রগতিশীলদের দেখেছি এবং বিশেষকরে ছোট থেকে যারা ফ্রেন্ড বা ব্যক্তিগতভাবে যাদের চিনি একটা কমন বৈশিষ্ট্য দেখেছি— এরা প্রচণ্ড রকমের ইসলাম বিদ্বেষী এবং এমন কেউ এখনো সামনাসামনি দেখি নাই যারা মাদক এবং মেয়ে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে না এবং এসবকে অপরাধও মনে করে না। এখানেই তাদের বিশ্বাস ইন্ডিভিজুয়ালিজম এবং মিউচুয়াল কনসেন্ট। সোজা বাংলায় এটা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা। এদের বিদ্বেষের ক্ষেত্রে ইসলাম ১ নম্বরে আর এছাড়াও তাদের অইডিওলজির বাইরে যারা সাধারণ মানুষ এদের প্রতিও একটা বিদ্বেষ এবং তাচ্ছিল্যতা থাকে।
আমার স্কুল লাইফ থেকে এক ক্লোজ প্রগতিশীল ফ্রেন্ড ছিলো। এখনো আছে কিন্তু সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য একটা ডিস্টেন্স মেইনটেইন করি। যেহেতু অনেক দিনের সম্পর্ক এবং সত্যিই ওর ভালো চাই। সম্পর্কের বদৌলতে ওর বিদ্বেষটা সরাসরি আমার সাথে থাকলে প্রকাশ করে না। কিন্তু ইন্ডাইরেক্টলি ভালোভাবেই করে।
Simu Samia: এটা অনেকদিন ধরেই খেয়াল করে আসছিলাম যে ভাইরাল কোনো কিছুতে কেবল একপক্ষকেই কিছু না দেখে দোষারোপ করা শুরু হয়, বিশেষ করে নারী ইস্যুতে। এর ফলে তালি বাজানো অন্য হাতটি বেঁচে যায়। এই হাইপের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাও করে অনেকজন। কারণ এখন হাওয়া তার দিকে বইছে। আমার বিচ্ছিন ভাবনা আপনি অনেক সুন্দর করে লিখেছেন। এটা গুরুতর একটি বিষয়। ❤
মোতাহের হোসেন: মুহিব মিয়া তার বাড়িতে তালা না লাগিয়ে চলে গেছেন ঈদের বন্ধে। তো চোর এসে সব চুরি করে নিয়ে গেল। এখন যখন মানুষজন মুহিব মিয়াকে বলবে যে মিয়া তুমি তালা লাগাও নাই কেন, তখন এটার নাম নাকি ভিক্টিম ব্লেইমিং! এরা তখন বলবে, তালা কেন লাগাবে? সবাই যদি মানসিকতা চেঞ্জ করে তাহলে তো চুরি হয় না। তালা নয়, দরকার মানসিকতা চেঞ্জ করা। এই একই কথা এইক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মেয়েটা বয়ফ্রেন্ডের সাথে নির্জনে জংগলের ভেতরে ছিল। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা মেয়েটাকে সম্ভবত রেইপ করেছে। মেয়েটা ও তার বয়ফ্রেন্ডের দোষ আছে। অব্যশ্য বয়ফ্রেন্ডের কী বা আসে যায়? এরা কি বিয়ে করতে প্রেম করে? তো মেয়েটার সিকুরিটি নিয়ে বফের তেমন চিন্তার ও কিছু নাই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মেয়েটা ওখানে কেন গেছে, কী করেছে, সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে আমাদের বাসা যেহেতু এর পাশাপাশি এলাকায় এবং আমার যেহেতু এখানে-ওখানে ঘোরাফেরার অভ্যাস আছে, তাই মাঝে মাঝে আমি মূল রাস্তা দিয়ে কিংবা হাঁটার পথ দিয়ে হাটাহাঁটি করি। আমি দেখেছি রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে একটু পরপর একটুখানি ঝোপের আড়ালে খানিকটা পরিষ্কার করা এবং সেখানে বসার ব্যবস্থা থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করে এমন ছেলেদের কাছ থেকে শুনেছি, প্রভাবশালী ছাত্ররা এসব বিশেষ জায়গাগুলোকে ইজারা দেয়। কেউ যদি তাদের পারমিশন ছাড়া বা তাদেরকে নজরানা না দিয়ে সেসব জায়গায় যায় বা সেই জায়গাগুলোকে ব্যবহার করে তখন সেসব কাপলদের উপর তারা ক্রেকডাউন করে।
এখনকার ঘটনার ডিটেইলস আমি জানি না। তবে আমি যেটা বললাম সেটা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে থাকার কারণে আমি জেনেছি। সাংবাদিক ছাড়াও গার্ড, কর্মচারী ও এলাকাবাসী বিভিন্নজনের কাছ থেকে আমি এ ধরনের বিষয়গুলো শুনেছি। কখনো কিছুটা দেখেছিও বটে।
ফারজানা জান্নাত শান্তি: স্যার, প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি আমার প্রশ্ন করা ভুল হয়ে থাকে।
আপনার কমেন্টে কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন যেগুলো সম্পর্কে আপনি অবগত এবং আমার বিশ্বাস, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদের প্রতিটি শিক্ষক এ ব্যাপারে অবগত না হলেও সিংহভাগ এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে ধারণা রাখেন। প্রশ্নটি হচ্ছে, সব অসংগতি জানার পরও কেন এই ধরনের ঘটনাগুলোর জন্ম হবে? কেন আমরা চোরের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি?
M Saiful Islam: ফারজানা জান্নাত শান্তি, কারণ এই অসংগতিগুলো, এই কালচারগুলো একটা গোষ্ঠী নার্সিং করে, পেট্রোনাইজ করে। যারা ঝোপঝাড়ের চিপাচাপা ইজারা দেয় এরাতো চুনোপুঁটি।
Puspita: এধরনের ঘটনাগুলো শুধু অপরাধ ও অপরাধী দিয়ে চিন্তা করলে ঘটনা কমানো সম্ভব না। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার সাথে সাথে ক্রিটিক্যাল থিংকিং আকারে ঘটনার পিছনের ঘটনা, কারণ, দায়, পরিবেশ সবকিছু নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করা উচিত। এগুলো নিয়ে লুকোচুরি করা উচিত না।
কয়েকদিন আগে পুলিশের এক সিনিয়র নারী অফিসার আত্মহত্যা করলো, সাথে সাবেক বডিগার্ড এক কনস্টেবলও। সবাই পুরো বিষয়টি হাইড করে যাচ্ছে। অথচ এই ঘটনার একটি নির্মোহ পর্যালোচনা, কার্যকারণ, পরিবেশ, নারী-পুরুষের মন অনেক কিছু নিয়ে কাজ করা যায়, উচিত। এদের ভিতর যে একটি ভিন্ন বা অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক ছিল সেটি কেউ যেন বলারও সাহস করছে না। আশ্চর্য! এভাবে সামাজিক অসুখ কীভাবে নিরাময় সম্ভব?!